সুবর্ণজয়ন্তীতে বিজিবি-বিএসএফের জমকালো ‘রিট্রিট সিরিমনি’
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক ৫টা, গোধূলী বেলা। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল আইসিপিতে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিজিবি-বিএসএফ তখন বন্ধ করে দেয় দু’দেশের সীমান্তের গেট। অনুষ্ঠানের এক পাশে বিজিবি ছাউনিতে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও সাধারণ জনগণ। অন্যদিকে বিএসএফ ছাউনিতে বসা বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও ভারতীয় নাগরিক।
দুই দেশের নাগরিকদের হাতে বাংলাদেশি পতাকা। পরনে নতুন পোশাক আর চারদিকে সাজ সাজ রব। অনুষ্ঠান দেখতে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকেই ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। কেউ দাঁড়িয়ে কেউ বসে, কেউবা গ্যালারিতে বসে এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
তবে আজ শুক্রবারের (২৬ মার্চ) রিট্রিট সিরিমনি অনুষ্ঠানটি ছিল একটু ভিন্নতা। আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ অনুষ্ঠিত হয়।
সীমান্তজুড়ে ৫৭৮টি বিওপিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ওঠে, দৃশ্যমান হয় বাংলাদেশের মানচিত্র। আর সন্ধ্যায় সামরিক কায়দায় পতাকা নামানোর আয়োজন হয় যাকে বলা হয় ‘রিট্রিট সিরিমনি’।
শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোল আইসিপিতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ কর্তৃক জমকালো যৌথ ‘রিট্রিট সিরিমনি’ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
প্যারেডে বিজিবির পক্ষে অংশ নেন যশোর রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূঞা, খুলনার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার, বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সেলিম রেজা।
বিএসএফের পক্ষে প্যারডে অংশ নেন বিএসএফ-১৫৮ এর কমামড্যান্ট শ্রী অরুন কুমার ও ১৭৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট শ্রী সুনীল কুমারসহ অন্যান্য স্টাফ অফিসার।
এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন এমপি, যশোর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, বেনাপোল পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রওশানুল ফিরোজ প্রমুখ। কোভিড-১৯ এর স্বাস্থবিধি মেনে প্রায় সহস্রাধিক বাংলাসদেশি ও ভারতীয় দর্শক প্যারড উপভোগ করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের মধ্যে যে বন্ধুপ্রতীম ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়েছিল সেই ভাতৃত্ববোধ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এ রিট্রিট সিরিমনি অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান-ভারত সীমান্তের ওয়াগাহ-আত্তারি পয়েন্টে দুই দেশের পতাকা নামানোর সময় এক জমকালো আয়োজন করে বিএসএফ ও পাকিস্তান রেঞ্জার্স। ১৯৫৯ সাল থেকে এটা হয়ে আসছে। বেনাপোল সীমান্তে এটা ২০১৩ সাল থেকে হয়ে আসছে। এরপর ২০১৮ সালে বাংলাবান্ধা সীমান্তেও এই রিট্রিট সিরিমনি শুরু হয়। এটা মূলত ব্রিটিশ মিলিটারির হেরিটেজ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে এই কালারফুল কর্মসূচি অবদান রাখে বলেই ধারণা সমরবিদের।
টিটি/এএএইচ/এএসএম