‘মনেই হচ্ছে না বিদায় নিয়েছি’
‘মনেই হচ্ছে না বিদায় নিয়েছি। প্রতিদিনের মতো মনে হচ্ছে কাল সকালে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। অনেক কাজ করতে হবে। অবচেতন মনে বার বার এমন ভাবনা এলেও বাস্তবতা হলো আজ (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়কে গুডবাই জানিয়ে এসেছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবে নিজের অনুভূতি জানান।
এমবিবিএস পাশ করে ১৯৭৯ সালে তরুণ চিকিৎসক হিসেবে তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমান বিএসএমএমইউ) -এ যোগদান করেছিলেন, তিনিই আজ পরিণত বয়সে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করলেন। দেশ-বিদেশ স্বনামধন্য এই নিউরো সার্জনকে আর দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করায় তিনি আরও দুই বছর দুই মাস ২৩ দিন অর্থাৎ ৬৭ বছর ২ মাস ২৩ দিন বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য পদে দায়িত্ব শেষের পর তিনি আর কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন না। তবে সুপ্ত কিছু বাসনা রয়েছে।
তিনি জানান, ১৯৭৯ সালে সাবেক তৎকালীন আইপিজিএমআরে যোগদান করেন। ৮ বছর পর ১৯৮৭ সালে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজে যান। ১৯৯০ সালে আবার আইপিজিএমআরে ফেরত আসেন। এর মাঝে এফসিপিএস পাস করে ১৯৯১ সালে সহকারি অধ্যাপক হন। দুই বছর পর তাকে ১৯৯৩ সালে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। ১৯৯৫ সালে আবার আইপিজিএমআরে ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান।
আইপিজিএমআর ১৯৯৮ সালে বিএসএমএমইউতে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়ে যান। ২০০২ সালে তাকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়ায় হাইকোর্টে রিট করেন। তার মামলার আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০০৫ সালে রিটের রায় হলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেন এবং তা ২০০১ সাল থেকে কার্যকর হয়। এরপর তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ও তিনবারের নির্বাচিত ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে বিসিপিএসের ক্রমান্বয়ে নির্বাচিত কাউন্সিলর, সেক্রেটারি, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবসেও অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ব্যস্ত সময় কাটান। এদিন সকালে ডা. মিল্টন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও অফিস প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে বিশ্বমানে উন্নীত করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিদিনের মতো আজও ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্লকের বিভিন্ন বিভাগে রাউন্ড দেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরে বি-ব্লকের নিচতলায় জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন মেনোপজ ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বর্তমানে উপাচার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সাবেক উপ-উপাচার্য ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাহানা আখতার রহমান, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, অবস অ্যান্ড গাইনী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তৃপ্তি রানী দাস, অধ্যাপক ডা. শিউলী চৌধুরী প্রমুখ।
এরপর দুপুর ২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতম উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের কাছে উপাচার্যের দায়িত্বভার অর্পণ করেন এবং দুপুর আড়াইটায় তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
এমইউ/এএএইচ