ডিএসসিসির চিঠির জবাব দেয়নি ২০ সংস্থা, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ
অডিও শুনুন
বছরজুড়ে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে ২৬টি সেবা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চিঠিতে বলা হয়েছিল, সড়কে খোঁড়াখুঁড়িসহ যে কোনো উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা ডিএসসিসিকে জানাতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মাত্র ছয়টি সরকারি সংস্থা চিঠি দিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। বাকিরা এ চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ৭ অক্টোবর মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সই করা চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। ২৫ দিনের মধ্যে ওই চিঠির জবাব জানাতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২০টি সংস্থা চিঠির উত্তর দেয়নি। এখন ওই সংস্থাগুলো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করতে অনুমতি চাইছে। কিন্তু সামনে বর্ষা মৌসুম। খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দিলে নগরে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে।
২৬টি সংস্থার কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা কাটার কারণে সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ডিএসসিসির মতামত নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ঢাকা শহর পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প এবং আগামী দিনে কী উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হবে, তার বিবরণ পাঠাতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল), ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চিঠির জবাব দেয়।
এছাড়া ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, তিতাস গ্যাস এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ডিএসসিসিকে অবহিত করে।
যে ২০ সংস্থা চিঠির জবাব দেয়নি
ডিএসসিসি থেকে চিঠি গেলেও তার জবাব দেয়নি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদফতর, স্থাপত্য অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক, মগবাজার–মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করতে চাইছে আরও অনেক সংস্থা। কিন্তু অনুমতি দিচ্ছে না ডিএসসিসি। তবে কোন কোন সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি চাইছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আগে সারাবছরই নগরে রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি চলত। এতে শুষ্ক মৌসুমে সড়কে প্রচুর ধুলাবালি এবং বর্ষা মৌসুমে কাদাপানির মাখামাখি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচিত হওয়ার পর সমন্বিতভাবে এই কাজটি করতে চেয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী সব সংস্থাকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিএসসিসি তেমন কোনো সাড়া পায়নি। এখন কয়েকটি সংস্থা চিঠির জবাব বা রাস্তা কাটার জন্য ডিএসসিসির অনুমতি চাইছে। কিন্তু তাদের আবেদন গ্রহণই করছে না ডিএসসিসি।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, একই জায়গায় একাধিক সংস্থা পৃথকভাবে কাজ করায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সেই কাজটি সমন্বয় করতেই ওই উদ্যোগ নেয়া। যারা যথাসময়ে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কোনো সংস্থাকে ইচ্ছেমতো কাজ করতে দেয়া হবে না।
এমএমএ/জেডএইচ/এইচএ/জেআইএম