লোকজ ঐতিহ্য কবিগান আর দেখা যায় না


প্রকাশিত: ১১:২২ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

দিন দিন ডিজিটাল যুগের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের লোকজ ঐতিহ্য। ঠিক তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে লোকজ ঐতিহ্যের এক বড় অংশ কবিগান। আগের মতো আর চোখে পড়ে না কবিগানের দল। কখনো কখনো আসর বসলেও জমে না তেমন একটা। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে আয়োজন করা হয় কবিগান।

অথচ, এক সময় গ্রামবাংলার উৎসব আয়োজনে প্রধান আকর্ষণ ছিল কবিগান। কবির সঙ্গে কবির তর্ক। কে জেতে আর কে হারে। শ্রোতাদের মাঝে টানটান উত্তেজনা। এক কবিয়ালের ছুড়ে দেয়া প্রশ্ন অন্যজনের উত্তর এবং পাল্টা প্রশ্নে বিভোর হয়ে সারা রাত কাটান শ্রোতারা। সমাজের কুসংস্কারগুলো কবিয়ালরা সংলাপ আর ছন্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করায় মেতে উঠেন তারা।

কিন্তু দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এই গান। কমতে শুরু করেছে কবিয়ালদের কদর। কবিয়ালদের গানের আসরগুলোতে নেই বসার ব্যবস্থা। থাকে না আলোকসজ্জা ও মঞ্চ। বেশিরভাগ সময় খোলা আকাশের নিচে বসেই পরিবেশন করতে হয় এই গান।

এই আসর দেখতে এসেছেন ৮০ বছর বয়সের জখন আলী। তিনি বলেন, মনের টানেই এসেছি। কত বছর ধরে দেখি না কবিগান। তাই ছোট নাতি মাসুদকে সঙ্গে নিয়েই দেখতে এসেছি।

আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে বলেন, কবিগান সকল ধর্মের মানুষের প্রিয়। এই গানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা যায়। খোতেজা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামের নারীদের বিনোদনের তেমন মাধ্যম নেই। সারা দিন কাজ আর কাজ। তাই কবিগান শুনতে এসেছি আনন্দ পাওয়ার জন্য, কিছু শেখার জন্য।

উপেন চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, কবিগানের মাধ্যমে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়। আর পাল্টা প্রশ্নের উত্তরও দেয়া হয়। মাঝে মধ্যে উত্তর সঠিক হয়। কখনো হয় না। কবিগানে সমাজের অনেক কুসংস্কার তুলে ধরে স্থানীয় মানুষদের সচেতন করা হয়।

কবিয়াল আসাদুজ্জানের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জে। পেশায় একজন দর্জি। সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরতেই তিনি গানের আসরগুলোতে আসেন। তিনি বলেন, কবিগানের আগের মতো তেমন কদর নেই। তবুও সংগ্রাম করছি। অর্থের যোগান না থাকায় শিল্পীদের উপযুক্ত সম্মানিও দিতে পারনি না আয়োজকরা। সব মিলিয়ে দিনদিন জৌলুস হারিয়ে ফেলছেন এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কবিগান।

তাই কবিগান টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপশি কবিয়ালদের বইগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ অঞ্চলের কবিগানের আয়োজক ও সংস্কৃতি কর্মীরা।

কবিগানের আয়োজক সাদেক ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয়ভাবে এই আয়োজন করা আজ কষ্টকর। এজন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।

সাংস্কৃতিক কর্মী মাসুদ আহম্মেদ সুবর্ন বলেন, কবিগান এ অঞ্চলের মানুষদের প্রানের স্পন্দন। মঞ্চে কবিদের লড়াই হয় সংস্কৃতিকে শক্তিশালি করার লড়াই। এ অঞ্চল থেকে দিন দিন কবিগান হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে কবিয়ালদের পুঁথি। এগুলো সংরক্ষনে এখনি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।  যৌলুস হারালেও এখনো গ্রামবাংলার মানুষগুলোর মনে দাগ কেটে আছে কবিগান। তাই এ গানের কথা শুনলেই ছুটে আসে দুরদুরান্ত থেকে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।