ফেসবুকে হরতাল পালনের প্রস্তুতি জামায়াত-শিবিরের!
সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে হরতাল পালন করবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির প্রতিবাদে আজ (সোমবার) হরতাল পালন করার ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান।
এর আগে মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রিভিউ আবেদন খারিজের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দায়সারাভাবেই পালন করেছে দলটি। হরতাল ডেকে বলা যায় ঘরেই বসেছিলে জামায়াত-শিবির। রাজধানীসহ সারাদেশে তেমন কোনো তৎপরতা ছোখে পড়েনি। অপরদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছিলে গণজাগরণ মঞ্চ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবারের হরতালেও জামায়াত-শিবিরকে তেমন একটা মাঠে দেখা যাবে না। মাঠে না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব থাকবে জামায়াত-শিবির। মুজাহিদের ফাঁসির পর বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে রাজপথে না থাকলেও ফেসবুকে সরব ছিল কর্মীসমর্থকরা।
অবৈধ পন্থায় প্রক্সি সারভার ব্যবহার করে এ দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীকেই ফেসবুক ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার এ প্রতিবেদককে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফেসবুক ব্যবহার করা এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রশিবিরের সভাপিত ডা. রেজাউল করিমের ফেসবুক দেখিয়ে বলেন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলির ভয়ে রাজপথে জামায়াত-শিবির না থাকলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।
ডা. রেজাউল করিম নামে এ পেইজে দেখা যায়, তার একটি স্ট্যাসাসে ২১ ঘণ্টায় লাইক হয়েছে ১৪,৪০৮টি, কমেন্ট পড়েছে ৭৬২টি এবং শেয়ার হয়েছে ২৭৩৪ বার। সেখানে সরকারের ফেসবুক বন্ধের সমালোচনা, বন্ধের পর ব্যবহারের করা নিয়ে বিভিন্ন কমেন্ট করতেও দেখা যায়। দেখা যায়, মুজাহিদের ফাঁসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কমেন্টস। এ ছাড়াও মুজাহিদকে নিয়ে খোলা হয়েছে `কারা নির্যাতিত কলম`সহ একাধিক পেইজ।
শিবির সূত্রে জানা যায়, সোমবারের হরতাল কর্মসূচিতে রাজপথে না থাকলেও সামাজিক গণমাধ্যমেই হরতালের সপক্ষে স্ট্যাটাস এবং কমেন্টস করে হরতাল পালন করবে দলটি। জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মতে, সরকার রাজনৈতিকভাবে তাদের নেতাদের হত্যা করছে। তাই হরতাল কিংবা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাদের নেতাদের মুক্ত করা যাবে না। এ জন্য তৃণমূল থেকেই নেতা-কর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে তেমন একটা আগ্রহী নন।
একদিকে, তাজিয়া মিছিলে হামলা, বিদেশি হত্যকাণ্ডসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিদিনই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ মুহূর্তে হরতালে সহিংসতা করে আরও রোষানলে পড়তে নারাজ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে, দলটিতে ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে দুই ভাগ, এক ভাগ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন নেতৃত্বের পক্ষে। আর অন্যভাগ পুরনো নেতৃত্বকেই দলটির ইমেজ মনে করছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, সাঈদীর রায় পরবর্তী যে আন্দোলন হয়েছে সে আন্দোলন করার অবস্থা দলটির বর্তমান সময়ে নেই।
আবার দেশ-বিদেশে জঙ্গিবাদের অভিযোগে যে ইমেজ সংকটে পড়েছে তার থেকে উত্তোরণের জন্য এ হরতালকে কাজে লাগাবে তারা। দায়সারা হরতাল পালন করে দলটি প্রমাণ করতে চায় তারা সহিংস এবং জঙ্গি নয়। এছাড়া সোমবারের হরতালকে ঘিরে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক।
হরতাল ডেকে রাজপথে নয়, ফেসবুকে কেনা এমন বক্তব্য জানার জন্য রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত দলটির একাদিক নেতাকে ফোন করা হলে সবার মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়।
এএম/বিএ