খুব কষ্ট নিয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা
হতাশা আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ছয়টি ছিটমহলের ভারতগামী বাসিন্দারা। রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম আজম তাদের বিদায় জানান।
দুপুরের পর নীলফামারী জেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া সীমান্ত দিয়ে তাদের ভারতে প্রবেশ করার কথা। নাগরিকত্ব বদলে বাংলাদেশ ছাড়ার শেষ মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের বাংলাদেশি এলাকা খারিজা ভাজনীতে জন্ম নিয়েছিলেন সুবোধ চন্দ্র রায়ের মেয়ে শ্রীমতি কৃষ্ণা রাণী। দুই বছর আগে দেবীগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় ছিটমহল বেলুয়াডাঙ্গা ছিটমহলের সুশীল চন্দ্রের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও ছিটমহলের বাসিন্দার সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর হাত ধরে তাকে ভারতে যেতে হলো।
দেশে বাবা-মাসহ পরিবার রেখে যেতে কষ্টের সীমা নেই কৃষ্ণা রাণীর। তার মতো অনেকেই বাংলদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাদের মধ্যে কেউ ছেলে-মেয়ে, কেউ বাবা-মাকে রেখে আবার কেউবা বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে হতাশা আর কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন। সেখানে গিয়ে তারা কি করবেন, কেমন হবে তাদের জীবন যাপন। এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই তাদের।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পঞ্চগড়ের তিন উপজেলার ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমলের মধ্যে ১৭টিতে জনবসতি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮৭ জন বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা জনগণনায় নাগরিকত্ব বদলের অপশন দিয়েছিলো। ২২ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই ৪৮৭ জন একই সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন।
ভারত যাওয়ার উদ্দেশ্যে শনিবার দিনভর জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিলুপ্ত ছয়টি ছিটমহলের ১৫ পরিবারের ৫৫ জন বাসিন্দা আসবাবপত্রসহ নিত্য ব্যবহার্য মালপত্র নিয়ে কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে জড়ো হন। রোববার সকালে প্রথম দফায় ওই ৫৫ জন বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা ভারতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়েন। দুইটি মিনিবাসে যাত্রী এবং তিনটি ট্রাকে করে মালপত্র পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিদায়কালে তাদের দুপুরের খাবার এবং রজনীগন্ধার স্টিক প্রদান করা হয়। বিকেল নাগাদ নীলফামারীর ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ওপারে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে কোচবিহার জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তাদের গ্রহণ করবেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।
নাগরিকত্ব বদল করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতগামী শ্রীমতি কৃষ্ণা রাণী জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভারতে যেতে ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু স্বামীর পরিবার ভারত যেতে চাইলে স্বামীর কথামতো আমাকেও বাধ্য হয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের বিলুপ্ত নাটকটোকা ছিটমহলের বাসিন্দা মৃত দিগেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে গোবিন্দ চন্দ্র রায় (২৫) জাগো নিউজকে বলেন, ২০১১ সালের জনগণনায় ভারতে যাওয়ার অপশন থেকে মায়ের নাম বাদ পড়ে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে মাকে রেখে আমার একমাত্র ছোটভাই রবিন চন্দ্র রায়কে (২০) নিয়ে ভারত যেতে হচ্ছে। জানি না সেখানে গিয়ে আমার কি হবে! বাংলাদেশে আমার মা একাই কি করবেন ভাবতে পারছি না।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম আজম জাগো নিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহল থেকে ৪৮৭ জন ভারতে যাবেন। ২২ থেকে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভারতের কোচবিভার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের গ্রহণ করবেন।
সফিকুল আলম/এমজেড/এমএস