মিটার না দেখেই বিল তৈরি করছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ


প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২১ নভেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিতরণ বিভাগে ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল নিয়েই গ্রাহকদের সব অভিযোগ। প্রতি মাসেই ব্যবহারের চেয়ে অতিরিক্ত ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

অতিরিক্ত এই বিলের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃশ্ব হয়ে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। প্রায় প্রতিদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিতরণ বিভাগে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে করে একদিকে বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি গ্রাহকদের মাঝেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রার পর থেকেই ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা, তবে বাড়েনি শুধু বিতরণ বিভাগের জনবল। এর মধ্যে লাইনম্যান আর মিটার রিডারের পদেই বেশি সঙ্কট। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের জন্য রয়েছে মাত্র তিনজন মিটার রিডার। প্রতি ১২শ গ্রাহকের জন্য একজন করে মিটার রিডার থাকার কথা থাকলেও ৫৮ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে মাত্র তিনজন মিটার রিডার দায়িত্ব পালন করছেন। আর তাই পর্যাপ্ত মিটার রিডার না থাকায় মিটারের রিডিংই কাউন্ট করা হচ্ছে না। এর ফলে প্রতি মাসেই আন্দাজে গ্রাহকদের হাতে ব্যবহারের চেয়ে অতিরিক্ত ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চরম ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পশ্চিম মেড্ডা এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক আমিরজাদা চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, গত কয়েক মাস ধরেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে ব্যবহৃত মিটার রিডিংয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ইউনিটের বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘ভুতুড়ে’ এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

শহরের কাজীপাড়ার বিদ্যুৎ গ্রাহক নাছরিন জাগো নিউজকে জানান, গত মাসে তার মিটার রিডিং ছিল ২শ ইউনিট কিন্তু বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাকে বিল দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩শ ইউনিটের। অতিরিক্ত দেড়শ ইউনিটের বিল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে বার বার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।

শহরের নয়নপুর এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক শ্যামল জাগো নিউজকে জানান, প্রতি মাসে বিদ্যুৎ অফিস থেকে সরবরাহকৃত বিলের কাগজের সঙ্গে মিটারের রিডিংয়ের কোনো মিল পাওয়া যায়না। এর ফলে প্রতিমাসেই ব্যবহারে চেয়ে বেশি ইউনিটের বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে হচ্ছে তাকে।

আমিরজাদা, নাছরিন আর শ্যামলের মতো এমন অসংখ্য গ্রাহককেই প্রতিমাসে ব্যবহারের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে বার বার ধর্ণা দিয়েও কোনো সমাধান না পাওয়ায় অনেক গ্রাহকই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন।

গ্রাহকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম জনবল দিয়েই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাই গ্রাহকদেরকেও কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সমাধানে গ্রাহকদের জন্য অচিরেই প্রিপেইড মিটারিং সুবিধা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।