৪৫.৩% অভিভাবক, ৬৮% শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদবোধ করছেন

বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল খুলে দিলে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে এবং ৬৮ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদ মনে করছেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অনলাইনে আয়োজিত এ জরিপে অভিভাবক, শিক্ষক ও অন্যান্য মিলে ১ হাজার ৯৬০ জন অংশ নেন। এদের মধ্যে ৫৭৬ জন অভিভাবক, ৩৭০ জন শিক্ষক এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৪ জন।
‘অবশেষে স্কুল খুলছে : আমরা কতখানি প্রস্তুত?’ শীর্ষক সংলাপে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম অনলাইন জরিপ ২০২১ (ফেব্রুয়ারি ২০২১)’ শীর্ষক এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য সম্পর্কে জানানো হয়, ১ হাজার ৯৬০ জনের অংশগ্রহণে এই অনলাইন জরিপের ফলাফলে উঠে আসে ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদবোধ করছেন না। তবে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ মনে করছেন।
অপরদিকে ৬৮ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদবোধ করছেন বলে মতামত প্রকাশ করেন। বিপরীতে ৩২ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে যেতে এখনো নিরাপদ মনে করছেন না।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, ৬৭ শতাংশ অভিভাবক সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি প্রদানে আগ্রহী নন এবং ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষক অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনে সরকারি অনুদানের কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, তাদের সন্তানের স্কুল, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম না। তবে ৬৮ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, তাদের স্কুলের স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী অন্যান্যদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন স্কুল খোলা উচিৎ। তবে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, স্কুল খোলার পরিস্থিতি নিয়ে একটি মিশ্র চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ স্কুল খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সবার প্রস্তুতি সমান নয়।
তিনি বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির অভিগম্যতায় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রস্তুতিতে পার্থক্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামের স্কুলের মাঝেও পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকারি পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন তিনি।
সংলাপে অংশ নিয়ে গবেষক ড. মঞ্জুর আহমেদ প্রস্তাব করেন, সব বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু কিছু মৌলিক বিষয়ে জোর দিয়ে স্কুল খোলা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কম পড়বে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য রাশেদা কে চৌধুরী সংলাপের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু স্কুলে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মনে করেন, স্বাস্থ্য-নির্দেশিকাগুলো বিশদ এবং স্কুলের ভেতর সব নিয়মাবলী মেনে চলা কঠিন হবে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ একই মত প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল খোলা যেতে পারে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ১৬টি জেলা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবক এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
এমএএস/এআরএ/এমএস