দলীয় টিকেট পেতে ফরিদগঞ্জে প্রার্থীদের জোর তদবির
চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ ফরিদগঞ্জ উপজেলা। তাই আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এটি গুরুত্ববহ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচন নিয়ে বড় দুটি দলসহ সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়ন তথা টিকেট প্রাপ্তি নিয়ে চলছে জোর তদবির।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা তীব্র। তফসিল দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। অন্যদিকে নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা না আসায় আড়ালে চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দোঁড়ঝাপ।
১৯.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ১৬টি মৌজা ও ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা জন্ম নেয় `গ` শ্রেণির ফরিদগঞ্জ পৌরসভাটি। এর আগে ২০০২ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র চার দিন পূর্বে স্থগিত হয়ে যায় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রম।
দ্বিতীয় দফা জন্মের পর ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মঞ্জিল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। সেই থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মেয়র পদ উদ্ধারে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
এবারের পৌরসভা নির্বাচনে বেশ আগে থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী মেয়র পদে নির্বাচন করার আশা পোষণ করছেন। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠান ক্রমশ নিকটে আসতে শুরু করায় সেই তালিকা আরো বাড়ছে।
ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে মেয়র প্রার্থীরা পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতিমধ্যেই এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল বাশার কালু পাটওয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম কন্ট্রাক্টর, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল, সহ-সভাপতি আ. রহমান বাবলু, লোকমান তালুকদার, ফরিদগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন রতন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাগ্নে মাসুদুর করিম ভূঁইয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. ফয়েজ মিজি। তবে এই তালিকা আরো বাড়তে পারে।
গত ৬ ও ৭ নভেম্বর যথাক্রমে পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পৌর নির্বাচন নিয়ে বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে প্রার্থীতা বিষয়ে কোনো ঘোষণা না আসায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হচ্ছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে সকলেই এখন স্থানীয় সংসদ সদস্য চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার সিদ্ধান্তের দিকে অপেক্ষা রয়েছেন। তবে ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত ব্যক্তি মনোনয়ন না পেলে ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনের মতো আবারো ভরাডুবি হতে পারে।
২০১২ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পৌর আওয়ামী লীগের অব্যাহতি পায় আরেক মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যে কোনো মূল্যে মেয়র পদ উদ্ধার করার জন্য প্রস্তুত থাকলেও দলীয় ঘোষণা না আসায় বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের কাছেই সকলে ভিড় করছেন। তবে মামলা হামলা এবং গ্রেফতারের ভয়ে তারা পোস্টারিং করা থেকে অনেকটাই দূরে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা মুখেও আনছেন না। সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপির বাড়িতে দলের তৃণমূল পর্যায়ের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই মূর্হূতে যারা সম্ভাব্য মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বা যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- তাদের মধ্যে রয়েছেন পজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান দুলাল, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে যাওয়া যুবদল নেতা আমানত গাজী।
সাবেক পৌর প্রশাসক সফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করলেও এবার তিনি উপজেলা ও চাঁদপুর জেলা জাতীয় পাটির সুপারিশ ও সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বর্তমান পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও ব্যাপক জন সমর্থনের কারণে এবারো তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তা নিশ্চিত। তার সমর্থকদের দাবি নির্বাচন সুষ্ঠ হলে মঞ্জিল হোসেন বিজয়ী হবেই।
এদিকে, জামায়াত ইসলামী দলগতভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী থাকতে পারে বলে শোনা গেছে। এছাড়া সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরো প্রার্থীর নাম বাড়তে পারে।
এআরএ/পিআর