জনতার উচ্ছ্বাসে ভাসলেন অনুপ চেটিয়া
ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট দেখে স্ত্রীকে চিনতে পারেননি সদ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যাওয়া উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। আদালতের ভেতরে গিজগিজে ভিড়ে একান্তে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তবু তার মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন সিবিআই কর্মকর্তারা। প্রায় দেড় দশক পরে প্রথম দেখা। প্রথম দর্শনে স্বামী অনুপ চেটিয়ার কাছে যে নিজের পরিচয় দিতে হবে ভাবতেই পারেননি মণিকা বরা চেতিয়া। পরে দু’জনই হেসে ফেলেন।
এই প্রথম বাবাকে দেখলেন ২২ বছরের জুমন। এত দিন নিজেকে কারাবন্দি ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই দেখে এসেছে। আজ বিমানবন্দর থেকে আদালত অবধি বাবাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও আমজনতার যে উচ্ছাস চাক্ষুষ করলো তা দেখে তিনি অবাক।
নিজেও ১৮ বছর জেলে ছিলেন। এত দিন পরে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন গুয়াহাটির সিজেএম আদালতে। এজলাসে তোলার আগে অনুপকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন উলফার সহ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ। কুশল বিনিময়ের পরে অনুপের সামনের ফোকলা দাঁত আর বেড়ে যাওয়া বয়স নিয়ে কিঞ্চিত হাসি-ঠাট্টা হল।
দীর্ঘ ২৪ বছর পরে আজ অাসামে পা রাখলেন উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। ১১ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ চেতিয়ার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। ১২ নভেম্বর দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাকে ৬ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড দেয়। চেটিয়া আসবেন জেনে বুধবার সকাল থেকেই তার স্ত্রী-পুত্র, এমনকি পুলিশকর্তারাও গুয়াহাটি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু বিকেল অবধি তিনি আসেননি। পরে উলফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে যাত্রীবিমানে আনতে সমস্যা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বিএসএফের বিশেষ বিমানে চেটিয়াকে গুয়াহাটি আনা হয়। বিমানবন্দরের পেছনের ভিআইপি দরজা দিয়ে পাঁচটি গাড়ির বহর চেটিয়াকে নিয়ে সিজেএম আদালতে রওনা হয়। অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও বিমানবন্দরে তার দেখা পাননি মণিকাদেবী ও উলফা নেতারা।
বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে নীল জামা, কালো প্যান্ট আর লালচে চুলের চেটিয়াকে নিয়ে কনভয় সোজা ঢুকে যায় আদালত চত্বরে। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক সঙ্গীতা হালৈয়ের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই প্রদীববাবু, উলফার পররাষ্ট্র সচিব শশধর চৌধুরি, অর্থসচিব চিত্রবন হাজরিকা, সহ সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, নেতা প্রাণজিৎ শইকিয়া এবং মণিকাদেবী চেটিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।
প্রদীপবাবু জানান, শরীরের বয়স বাড়লেও অনুপ মনের দিক থেকে একইরকম শক্ত আছেন। তিনি বলেন, ২৪ নভেম্বর উলফার সঙ্গে কেন্দ্রের শান্তি আলোচনা রয়েছে। আশা করি অনুপও বৈঠকে থাকবে। অনুপকে দেখার জন্য এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দিল উলফা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
সিবিআইর একটি সূত্র জানিয়েছে, চেতিয়ার সঙ্গে কারাগার থেকেই পরেশ বরুয়া ও দৃষ্টি রাজখোয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে কী পরেশকে ফেরাতে অনুপকে কাজে লাগাবে উলফা? প্রদীপবাবু বলেন, এত কথা হয়নি। অনুপ অবিভক্ত উলফার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আছেন। তিনি জনতার সামনে আসতে চান। অংশ নিতে চান শান্তি আলোচনায়।
১৯৮৬ সালের হত্যার ঘটনা নিয়ে ১৯৮৮ সালে একটি মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। আজ ওই মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবী ১৪ দিনের জন্য চেটিয়াকে হেফাজতে চান। চেটিয়ার আইনজীবী বিজন মহাজন দাবি করেন, ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিল সিবিআই। এত বছর পরে ওই মামলায় চেটিয়াকে আটকে রাখা অযৌক্তিক। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক চেটিয়াকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআইয়ের হেফাজতে দেন। আরও বলেন, অনুপ অসুস্থ। তাই প্রতিদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। আনন্দবাজার পত্রিকা।
এসআইএস/আরআইপি