এবারও হেরে গেলেন আল-আমিন ও সিমু দম্পতি


প্রকাশিত: ০৯:৩৭ এএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৫

জন্মের অভ্যর্থনা না পেয়ে প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিল তার। গর্ভধারিণী মায়ের উপেক্ষা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি! তাই পালিত বাবা-মার স্নেহ-ভালোবাসা তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। সকলের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে কুষ্টিয়ায় মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক শিশু ছামীম হোসেন সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জীবন বাঁচাতে শিশুটির দত্তক প্রত্যাশী দম্পতি আল আমিন ও সুমি বেগম সোমবার মধ্য রাতে নবজাতক শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য।

গত শনিবার রাতে কোনো এক সময় জন্ম নেয়া ফুটফুটে এ নবজাতককে সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরী এলাকার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় কোনো একজন।

রোববার সকালে রাস্তার পাশে কান্না শুনতে পেয়ে স্থানীয়রা নবজাতকটিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। উদ্ধারের পর চিকিৎসা শুরু হলে রোববার বিকেলে শরীরের তাপমাত্র কমে যাওয়ায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য সুমি নামের এক মহিলাকে লিখিত দ্বায়িত্ব দিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করে। রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগেই শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে বেসরকারি সনো প্রাইভেট হসপিটালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে সোমবার বিকালে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা আর খিঁচুনি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ১২টার দিকে ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত লাইভ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই সময় শিশু হাসপাতালে লাইভ সাপোর্ট খালি না থাকায় আল আমিন ও সুমি দম্পতি তাকে মহম্মদপুর কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কেয়ার হসপিটাল থেকে নবজাতককে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

চিকিৎসার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নবজাতক শিশুটি চলে যায় না ফেরার দেশে।

শিশুটির দত্তক প্রত্যাশী আল আমিন জানান, রাত ১১টার দিকে শিশুটি মারা গেছে। তিনি ওই সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

kushtia

তিনি বলেন, মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সুমি পাগল প্রায়। আল আমিন জানান, বুধবার ঢাকাতেই তাকে দাফন করানো হবে। নবজাতক উদ্ধারের পর থেকে নিজের সন্তানের মতো করে শিশুটির দেখ ভাল করছিলেন সুমি বেগম। বিয়ের ৯ বছর পার হলেও আল আমিন মিয়া ও সুমি বেগম দম্পত্তির সংসারে কোনো সন্তান হয় নি। শনিবার রাতের কোনো এক সময় ফুটফুটে এই ছেলে শিশুটির জন্ম হয়। কুষ্টিয়া শহরতলীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশের ময়লা আবর্জনার স্তুপের মাঝে কোনো একজন নবজাতকটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রোববার সকালে রাস্তার পাশে কান্না শুনতে পেয়ে স্থানীয় হোটেলের একজন নারী শ্রমিক নবজাতকটিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাস্তার ময়লা-আবর্জনার পাশে পড়ে থাকা এই শিশুটিকে উদ্ধারের পর কুষ্টিয়া জুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

এক আত্মীয়ের মাধ্যমে নবজাতক শিশু উদ্ধারের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে কর্মরত কুষ্টিয়া শহরতলীর কুমারগাড়া এলাকার আলামিন মিয়া ও তার স্ত্রী সুমী বেগম।

সন্তানহীন এই দম্পতি বাবা-মা হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে নবজাতক শিশুটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শিশুটিকে বাঁচাতে প্রাণন্ত চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন আল আমিন ও সুমি দম্পতি।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জমির উদ্দিন জানান, জন্মের পর থেকে মার বুকের দুধ ও পরিচর্যা না পাওয়ায় শরীরে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এছাড়া মায়ের বুকের দুধ না পাওয়ার কারণেও সমস্যা হয়েছে। শীতে খোলা জায়গায় পড়ে থাকায় বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট হয়েছে। এসব কারণেই শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।  

আল-মামুন সাগর/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।