‘অনিরাপদ খাদ্যে ভয়াবহ হুমকিতে প্রজন্মের উৎপাদনশীল ক্ষমতা’

অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদনশীল ক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আগামীতে সমস্যায় পড়বে। একইসঙ্গে ভয়াবহ হুমকিতে পড়বে প্রজন্মের উৎপাদনশীল ক্ষমতাও।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা এসব দাবি করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলন বাংলাদেশ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কামরুজ্জামান বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সরকারের নানামুখী কর্মকাণ্ডে দেশ খাদ্য উৎপাদনে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখনও সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। দেশে খাদ্য ব্যবসায় জড়িত কিছু অতি মুনাফাভোগী এবং ভেজালকারীচক্রের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
তিনি আরও বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে শুধু ব্যক্তি হিসেবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয়, এতে জাতি হিসেবে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে জাতি হিসেবে আমরা মারাত্মক সমস্যায় পতিত হব।
ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে নেয় এবং এর ব্যত্যয় সেসব দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে অল্প কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ভেজাল রোধ সম্ভব নয়। ভেজাল রোধে আরও বেশি করে সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।
নিরাপদ খাদ্যের জন্য মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে জানিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, শুধু শহর কেন্দ্রিক নয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রাম পর্যায়েও নিরাপদ খাদ্যের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম দিকের লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির বিষয়গুলো আছে। টেকসই উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় সেখানে নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা দু’টিই দরকার। এই বিষয় দু’টি নিশ্চিত করতে না পারলে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে সর্বপ্রথম প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। এর অভাবেই মানুষ খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মতো জঘন্য কাজ করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আইন এবং পৃথক সংস্থা থাকলেও রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের কারণে সৎ ও সাহসী সরকারি কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বর্তমান সরকার অনেক মেগা প্রকল্পে সফল হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কামরুজ্জামান বাবলু বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম জনশক্তির বিকল্প নেই। আর কর্মক্ষম জনশক্তির জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প পুষ্টি সংবলিত খাদ্য গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের মানুষ ক্রমশ নিম্নমানের খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদনশীলতা প্রদর্শন করতে পারছে না।
দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভেজাল ঢুকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শক্ত হাতে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় তা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ছোট বড় সব খাবার দোকানে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় আইনের বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য।
সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, সরদার মো. আব্দুস সাত্তার, জেসমিন আরা, নোমান মোশারেফ, আব্দুল আজিজ, ইমাম হাসান, মাহমুদুর রহমান খান বাপ্পী, শামসুজ্জামান নাঈম, রিপন মিয়া ও নজির আহমেদ প্রমুখ।
এমইউ/এসজে/এমএস