দিনাজপুরে তিন পৌরসভায় জিততে চায় জামায়াত
নির্বাচনী তফসিল কিংবা সঠিক দিন-তারিখ নির্ধারণ না হলেও ইতোমধ্যে দিনাজপুরের ৯টি পৌরসভার মধ্যে ছয়টি পৌরসভা নির্বাচনে সরগরম শুরু হয়েছে। এই পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে সরব থাকলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মাঠে নেই বললেই চলে। আর নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছে জামায়াতের প্রার্থীরা।
দিনাজপুরে ৯টি পৌরসভার মধ্যে ছয়টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় সেতাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট পৌরসভায় এবং নব ঘোষিত বিরল পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় প্রথম দফায় নির্বাচন হচ্ছে না। যে ছয়টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে কমপক্ষে তিনটি পৌরসভায় নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জিততে চায় জামায়াতে ইসলামী।
দলীয় প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে তেমন বিরোধ না থাকলেও বিএনপির মধ্যে বিরোধ চরমে। বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে মাঠে না থাকলেও হাই কমান্ডের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ থাকলেও বিরোধীদলে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। তবে কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন শুভেচ্ছা ব্যানারে ছেয়ে ফেলেছে রাস্তার অলিগলি।
১৮৬৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে দিনাজপুর পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ২৪.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার মোট ২৩টি মৌজায় ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। দিনাজপুর পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। সেসময়ে মেয়র পদে বিজয়ী হন জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে এ পৌরসভার মেয়র ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা সফিকুল হক ছুটু।
তিনি ২ দফায় ২০০৪ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মেয়র ছিলেন। আর ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন লাবু। দিনাজপুর জেলা মূলত বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি দিনাজপুরে। তাছাড়া তার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী। সেই সময়ে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের পাশাপাশি টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে দলের নেতাদের ইমেজের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা সদরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যা বিএনপির উন্নয়নকেও ছাপিয়ে গেছে বলে অনেকের অভিমত। বিভিন্ন এলাকায় দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার পাশাপাশি বর্তমান জনগণের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করছেন দলটির রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী নেতারা।
পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো ও সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।
দিনাজপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পাঁচ বছর যাবৎ মেয়র পদে থাকলেও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা এবং জেলা শহরের পৌরসভা হিসেবে তেমন একটি উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় সম্পৃক্ততাও ছিল খুব কম। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় মামলা-মোকাদ্দমায় জড়াননি তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাবার বিষয়ে তার সম্ভাবনা থাকলেও দলের কিছু নেতাকর্মীর মাঝে তাকে নিয়ে বিরূপ মনোভাব রয়েছে।
নির্বাচনে মনোনয়ন পাবার দৌড়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান জুয়েল। এর আগে তিনি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। মনোনয়ন পাবার আশায় তিনি বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর বিএনপির নেতা হিসেবে তার সকল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততাও চোখে পড়ার মতো।
এই পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রচার প্রচারণ চালাচ্ছেন বিএনপির আরেক নেতা ও সাবেক প্যানেল মেয়র আলতাফ উদ্দিন। তিনি গত নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে হেরে যান। এরপর থেকেই তিনি মেয়র পদে বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও দেখা যায় তার অংশগ্রহণ।
দীর্ঘ সময় ধরে পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন বর্তমান পৌর কাউন্সিলর ফয়সল হাবিব সুমন। তিনি গত নির্বাচনের পর থেকেই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে তার প্রচারণামূলক ব্যানার। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শোনা যাচ্ছে তিনি এবারে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশপাশি পেশায় তিনি ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রচারণা চালিয়ে আসছেন এবং এখন পর্যন্ত এদিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছেন তিনি।
দিনাজপুর পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থন রয়েছে তার দিকে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে একজন তিনি। ইতোমধ্যেই তাকে দলীয় মনোনয়ন দিতে শহর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সমর্থন দেয়া হয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে নাম রয়েছে সাবেক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরীর। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। সে সময় নিরঙ্কুশভাবে দলীয় সমর্থন ছিল না তার পক্ষে।
প্রচার-প্রচারণায় না থাকলেও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন কোতয়ালী আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন। এর আগে তিনি স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ছিলেন ও দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের নেতাকর্মীদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই নেতার নাম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের সময়েও ছিল। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার দাবি উঠলে সর্বশেষ তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেননি। বিভিন্ন কার্যক্রমে তার অবদান থাকায় তাকে এবার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে দাবি উঠেছে।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক কাজী তাজউল সামস প্রিন্স। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় এবারে দলীয় মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আগ্রহী তিনি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে আগ্রহী হলেও মেয়র নির্বাচিত হলে দলের জন্য নয় সকলের জন্য মেয়র হবেন এমন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বজলুর হক। এর আগে তিনি দিনাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী সাবেক পৌর মেয়র সফিকুল হক ছুটু। তিনি এক সময়কার জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। তবে বর্তমান পর্যায়ে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তিনি আওয়ামী ঘরানার সংগঠন উদীচীর সঙ্গে যুক্ত।
পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল। এর আগে আহমেদ শফি রুবেল জাতীয় নির্বাচন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। তবে সেইভাবে ভোটারদের সমর্থন পাননি তিনি।
এছাড়াও জামায়াত থেকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন জেলা জামায়াতের সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মাইনুল আলম। আর নিজেকে জানান না দিলেও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সৈয়দ মোকাদ্দেক হোসেন লাবুর। প্রচারণার দৌড়ে রয়েছেন জেলা জাগপার সভাপতি আলহাজ রকিবউদ্দিন চৌধুরী মুন্নাও।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা জানান, দলীয়ভাবে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই তারা কাজ করবেন। তাদের মনোনয়ন চাওয়া ও পাওয়া একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, হঠাৎ করে সরকার দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করেছে, তাদের যুক্তির সঙ্গে দিনাজপুরের নেতাকর্মীরাও একমত। এরপরও বিএনপি নির্বাচনে যাবে। দিনাজপুরে পৌরসভা নির্বাচনের তৎপরতা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো শুরু হয়নি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে রয়েছেন, সেহেতু নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তিনি দেশে আসার পর হবে। আমরাও সেই অপেক্ষাতে রয়েছি। কেন্দ্র এবং দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা নির্বাচন ও মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
তবে তৃণমূলে রয়েছে অনেক ক্ষোভ ও হতাশা। তারা বর্তমান মেয়র বিএনপির নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গর আলমের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন বলে জানা গেছে।
এদিকে পার্বতীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম তৎপরতা শুরু হয়েছে। পার্বতীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা শহরে ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে সুকৌশলে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা অগ্রিম বিভিন্ন শুভেচ্ছা বিনিময়সহ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে শুভেচ্ছার নামে মূলত নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি এই পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি নেতা এজেডএম মেনহাজুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সামনের নির্বাচনে তিনি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। পৌর নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ছাড়াও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পাঁচবারের নির্বাচিত সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এস এইছ সাজ্জাদ। তবে এই পৌরসভায় জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই।
পার্বতীপুর পৌরসভার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামনের নির্বাচনে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক সাম্ভব্য কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিতে পারেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত রেলওয়ে জংশনখ্যাত পার্বতীপুর শহর ১৯৭২ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে পার্বতীপুর পৌরসভা “ক” শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
ফুলবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে গণ সংযোগে সময় কাটাচ্ছেন সেখানকার প্রার্থীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া ও সহযোগিতা প্রার্থনা করার পাশাপাশি করছেন উঠান বৈঠক।
পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির একাধিক প্রার্থীসহ প্রচারণায় নেমেছেন বর্তমান মেয়রসহ ১২ জন মেয়র প্রার্থী। তার মধ্যে বর্তমান মেয়রসহ চারজন প্রার্থী নির্দলীয়ভানির্বে বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা ভোটাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
গণ-সংযোগে নামা প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান মেয়র ও ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনকারী সংগঠন অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, সাবেক পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলী সরকার পুতু, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল মান্নান সরকার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাজুল ইসলাম, যুবলীগের সভাপতি খাজা মইনুদ্দিন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক এস,এম নুরুজ্জামান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর আবুল বাসার, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শিবলী সাদিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী দলিল লেখক আল আমিন সরকার, সাবেক পৌর মেয়র হবিবর রহমান সরকারের বড় ছেলে আব্দুল কাইয়ুম সরকার, জাতীয় পার্টির নেতা জামিল হোসেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়তের আমির জয়নাল আবেদিন।
সম্প্রতি ঘোষণা অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে দলীয় নেতারা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামলেও নির্দলীয়ভাবে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন তিনজন। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক, সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, আল আমিন সরকার ও সাবেক পৌর মেয়র হবিবর রহমান সরকারের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম সরকার।
এদিকে, ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শাহজাহান আলী সরকার পুতু এগিয়ে থাকায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুবলীগের সভাপতি খাজা মইনুদ্দিন।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেই তারা প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। তবে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন চারজন। তারা হলেন, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল মান্নান সরকার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাজুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর আবুল বাসার ও যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক। এছাড়া একজন করে প্রার্থী রয়েছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা জামিল হোসেন।
বর্তমান পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেহেতু সরকারের পরিবর্তন ঘটে না সে কারণে দলীয় কোনো প্রভাবই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পড়ে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা সরাসরি প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ কারণে সব দলের লোকেরাই তাদের মনমতো প্রার্থীকে বেছে নেয়। তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে অধিকাংশ ভোটার নির্দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়ে এসেছে। একই কথা বলেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের ও নিকটতম প্রার্থীদেরকেই ভোট দিয়ে থাকেন। যার ফলে স্থানীয় নির্বাচনগুলো এলাকা ভিত্তিক ভোটেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়।
এদিকে পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ইতোপূর্বে স্থানীয় সরকারগুলো নির্দলীয়ভাবে হয়েছে। সেখানে দলের পক্ষের প্রার্থী থাকলেও মনোনীত প্রার্থী ছিল না কিংবা দলীয় প্রতীকও ছিল না। এইবারের নির্বাচনে দলীয় লোকজন দলের প্রার্থী ও দলীয় প্রতীককে গুরুত্ব দেবে বেশি। একই কথা বলেন, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান আলী সরকার পুতু।
এমজেড/পিআর