শ্রীহীন চিড়িয়াখানা
একটি দেশের চিড়িয়াখানার অবস্থায়ই নাকি বলে দেয় দেশটি কতোটা সভ্য। মিরপুরের চিড়িয়াখানার যে অবস্থা সেটি আসলে কী তুলে ধরছে। অযত্ন অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত নিদর্শন যেন এই চিড়িয়াখানাটি। দিন দিন চিড়িয়াখানা তার শ্রী হারাচ্ছে। মারা যাচ্ছে বাঘসহ দুর্লভ প্রাণী। ময়লা দুর্গন্ধে টেকা দায়। এরফলে কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। মানুষজন বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। এ অবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে চিড়িয়াখানার সার্বিক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬১ সালে। প্রায় ২১৩.৪১ একর জায়গা নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৪ সালে পুরোপুরি এর কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যক্রম শুরু হওয়ার চার দশক পার হলেও এর আধুনিকায়ন হয়নি। ফলে প্রাণীদের জন্য নির্মিত ২৩৭টি শেড এখন আর প্রাণীবান্ধব নয়- এমনটিই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া চিড়িয়াখানার প্রাণী মারা যাচ্ছে। ছয় মাসে অন্তত ছয়টি বৃহৎ দুর্লভ প্রাণী মারা গেছে। ১৩ অক্টোবর ‘প্রমীলা’ নামে একটি বেঙ্গল টাইগার মারা যায়। এছাড়া মারা যাওয়া অন্য প্রাণীগুলো হলো শিম্পাঞ্জি, জিরাফ, সিংহ, ওয়াইল্ডবিস্ট ও জলহস্তী। চিড়িয়াখানায় বর্তমানে মাংসাশী, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ, তৃণভোজী বৃহৎ প্রাণী ও পাখি- এই চার শাখায় ১১৪ প্রজাতির ১ হাজার ৭২৫টি পশুপাখি আছে। এদের অনেকগুলোর আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে এসেছে। এছাড়া ঠিকমত খাওয়া দাওয়া ও পরিচর্যার অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে অনেক পশু-পাখি। রোগাক্রান্ত হয়ে অনেকগুলো আছে মৃত্যু ঝুঁকিতে। পশু-পাখি মারা গেলেও সে অনুযায়ী আমদানি করাও হচ্ছে না।
এছাড়া আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা অ্যাক্ট না থাকা এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু অ্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামস (ওয়াজার) সদস্য পদ না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। এটা খুবই দুঃখজনক যে, চিড়িয়াখানার অবকাঠামো, খাঁচার বিন্যাস, পরিবেশসহ সব কিছু আধুনিক মানের না হওয়ায় সদস্য পদ পাওয়া যাচ্ছে না। চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নের ব্যাপারে তিন বছর আগে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপত্য অধিদপ্তরকে শেডসহ সব কিছু আধুনিকায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তা প্রক্রিয়ার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিনোদনহীন রাজধানীবাসী ছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরা এসে থাকেন। কিন্তু চিড়িয়াখানায় যদি দেখার মত কিছু না থাকে, শেডগুলো খালি পড়ে থাকে, প্রাণীগুলো থাকে রোগাক্রান্ত- তাহলে মানুষজন কেন আসবে। জাতীয় চিড়িয়াখানার এই অব্যবস্থা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। দিন দিন যেখানে চিড়িয়াখানার আধুনিকায়ন হবে, প্রাণীবান্ধব হবে- দর্শক আকর্ষণের সব রকম চেষ্টা থাকবে- কিন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র।
এই দুরবস্থা দূর করে একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। দেশের মানুষ চিড়িয়াখানার শ্রীহীন অবস্থা দেখতে চায় না।
এইচআর/এমএস