বগুড়া পৌর নির্বাচন : মনোনয়ন পেতে সরকারি দলের তদবির
তফসিল ঘোষণার আগেই বগুড়ার পৌরসভাগুলোয় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারি দলে প্রকাশ্য তদবির জোরালো হলেও বিএনপিতে চলছে গোপনে তোড়জোড়। তৃণমূলের নেতারা চেয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। তবে ব্যতিক্রম জামায়াতের ক্ষেত্রে। জামায়াতের নেতারা পুলিশি হয়রানি এবং মামলার কারণে মাঠে নামতে পারছেন না।
বগুড়া জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় ১২টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলো হলো বগুড়া সদর, ধুনট, শেরপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, সান্তাহার, সারিয়াকান্দি, শিবগঞ্জ, গাবতলী, সোনাতলা, দুপচাঁচিয়া এবং তালোড়া। এর মধ্যে মামলার কারণে সোনাতলা এবং তালোড়া ও দুপচাঁচিয়া পৌরসভার মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ৯টি পৌরসভায় মেয়র পদ ৯টি, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৯৩টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩১টি পদে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। এর মধ্যে বগুড়া পৌরসভায় ওয়ার্ড রয়েছে ২১টি। বাকি পৌরসভাগুলোয় ৯টি করে ওয়ার্ড রয়েছে।
আয়তন ও ভোটারের দিক থেকে বগুড়া পৌরসভা দেশের অন্যতম প্রধান পৌরসভা। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৭১১ এবং আয়তন প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার। শহরের প্রতিটি এলাকা সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। তারা গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এছাড়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অন্য আটটি পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা রয়েছে সান্তাহারে ২৩ হাজার ২৮৮, কাহালুতে ৮ হাজার ৭০১, গাবতলীতে ১৫ হাজার ৫৫৩, ধুনটে ৯ হাজার ৯২২, নন্দীগ্রামে ১৩ হাজার ৬৫৭, শিবগঞ্জে ১৬ হাজার ৯৩, শেরপুরে ২০ হাজার ৪০, সারিয়াকান্দিতে ১৪ হাজার ১২৫।
খাঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় অনেক জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী। এজন্য দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউই দলের হয়ে তা প্রকাশ করতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা জানান, পুলিশি হয়রানির ভয়ে তাদের দলের অনেকেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। বগুড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড.একেএম মাহবুবর রহমান দু’মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়র পদে তিনিসহ বিএনপির কেউ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মাঠে নামেননি। তারা তাকিয়ে আছেন বিএনপির হাইকমান্ডের দিকে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসলেই কেবল সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নামবেন। তবে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতারা পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে এলাকায় গণসংযোগে করছেন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভে বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মন্টু চেষ্টা করছেন।
চেষ্টার তালিকায় আরও রয়েছেন- সান্তাহার পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো ছাড়াও বিএনপি নেতা ফিরোজ মো. কামরুল হাসান। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র গোলাম মোর্শেদ, পৌর সাধারণ সম্পাদক সাইদুল বারী, আদমদীঘি উপজেলা শ্রমিকলীগ আহ্বায়ক রাশেদুল আসলাম রাজা, সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম মন্টু।
কাহালু পৌরসভায় বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, তার ছোট ভাই কামাল উদ্দিন কবিরাজ, আব্দুল মান্নান, ইউনুস আলী টনি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল মান্নান (ভাটা), অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম রফিক, ফরিদুর রহমান ফরিদ। এছাড়া জামায়াত নেতা জহুরুল ইসলাম বাদশা সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী।
গাবতলী পৌরসভায় বর্তমান মেয়র পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফ। তিনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা নজির হোসেন, রাজু পাইকাড়, তাজুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান কাউন্সিলর মোমিনুল হক শিলু দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।
ধুনট পৌরসভায় বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এজিএম বাদশা ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান টিআইএম নূরুন্নবী তারিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান, কাউন্সিলর আল আমিন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক মেয়র ও পৌর সভাপতি আলীমুদ্দিন হারুন মন্ডল, সাবেক পৌর প্রশাসক ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকতার আলম সেলিম।
নন্দীগ্রাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা শুশান্ত কুমার শান্ত ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- আহসান বিপ্লব রহিম, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, একেএম ফজলুল হক কাশেম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- আনিছুর রহমান, রফিকুল ইসলাম পিংকু, লাল চন্দ্র মোহন্ত, মাহমুদ আশরাফ মামুন। জাসদের সম্ভাব্য প্রার্থী মাহবুবুর রহমান রুস্তম।
শিবগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমান মতিন ছাড়াও মেয়র প্রার্থী বুলবুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- তৌহিদুর রহমান মানিক, ডা. মোখলেছার রহমান ও জাতীয় পার্টির অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান।
শেরপুর পৌরসভায় বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা স্বাধীন কুমার কুন্ডু ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন শাহ আলম পান্না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা সভাপতি আব্দুস সাত্তার, অ্যাড. তোজাম্মেল হক ও যুবলীগ নেতা তারিকুল ইসলাম তারিক।
সারিয়াকান্দি পৌরসভায় বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা টিপু সুলতান। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী সিরাজুল ইসলাম মানিক, এবিএম রেজাউল করিম মতিন, কাউন্সিলর খোরশেদ আলম। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন জালাল উদ্দিন। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আব্দুল হামিদ সরদার ও এই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বগুড়ার ৯টি পৌরসভার মধ্যে কাহালু ও ধুনট ছাড়া ৭টিতে বিএনপি নেতারা মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। বগুড়া জেলা নির্বাচন অফিসার ইউনুছ আলী জানান, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ পৌরসভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
এসএস/এমএস