সফর মাসের ফজিলত ও কিছু কথা
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে অসংখ্য নিয়ামাতের মধ্যে নিমজ্জিত করে রেখেছেন। তাঁর অন্যতম নিয়ামত হলো দিন-রাত, মাস। রাত ও দিনের জন্য চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। এ চন্দ্র ও সূর্যকে তিনি বর্ষ গণনার মাধ্যম বানিয়েছেন। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। চন্দ্রের হিসাবে এখন চলছে সফর মাস। এ মাসের কিছু কথা জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-
আরবি বছরের দ্বিতীয় মাস সফর। আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি দিন-রাত-মাস-বছরই ফজিলতপূর্ণ। তাই সফর মাসও এর বাইরে নয়। আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত, কল্যাণ পেতে হলে এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আদায়ের পাশাপাশি গভীর রজনীতে নফল ইবাদতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে প্রভুর দরবারে খালেছ নিয়তে কোনো কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন।
অনেকে এই মাসকে একটি দুঃখের মাস মনে করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সুসংবাদ দেবে, আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সফর মাসের শিগগিরই অবসান কামনা করেছেন। তাইতো এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদাত করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির সমূদয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে হবে।
সফর মাসের হাদিসটির ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদগণ দুইটি মত তুলে ধরেছেন- প্রথমত- হাদিসটি সম্পূর্ণ জাল, মিথ্যা যা আদৌ রাসুলের হাদিস নয়, রবং যারা এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তাদের কেউই হাদিস সংরক্ষণকারী নয়।
দ্বিতীয়ত- হাদিসটি সহিহ, তবে এ হাদিসের প্রেক্ষাপট কী তা জানতে হবে।
মূলত হাদিসটি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তা হলো- একবার হজরত আবু বকর ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূরের এক জনপদে সফরে যান। সে সফর থেকে ফিরতে অনেক বিলম্ব হচ্ছিল। কোনো চিঠি বা সংবাদও আসছে না। এমতাবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় সাহাবির জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ঐ সময় একটি চিঠি এলো, তাতে লেখা ‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি সফর মাস শেষে মদিনায় ফিরব। কিন্তু তখনো সফর মাসের বেশ সময় বাকি। তাই তিনি হজরত আবু বকরের অপেক্ষায় থাকাকালীন সময় সফর মাস শেষের অপেক্ষায় থাকলেন যে, কখন সফর মাস শেষ হবে। তখন তিনি ওই হাদিসটি বলেছিলেন।
তাছাড়া এ মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহর সোম্বা বলা হয়। সাধারণ মুসলমানগণ এ দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করে। কিন্তু আখেরি চাহার সোম্বা কী? তা অনেকেই জানে না। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের শেষ দিকে প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলেন। সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি অনেকটাই সুস্থতা লাভ করেন। এ খুশিতে অনেক সাহাবি বিভিন্নভাবে দান-সাদকা করেছেন। এ দান-সাদকা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ।
তবে এমন কোনো হাদিস বা দলিল নেই যে, পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম এ দিনটি খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করেছেন বা প্রতি বছর দান-সাদকা করেছেন। যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরামগণের জামানায় ছিল না। তাই সে হিসাবে আখেরি চাহার সোম্বা ঘটা করে পালনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এ ছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখতেন। যাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলা হয়ে থাকে। এ রোজা রাখলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
সুতরাং আল্লাহ সৃষ্ট সব দিন-রাত-মাসের ফজিলত অত্যাধিক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মাসের পত্যেকটি দিন-রজনীতে ফরজ ওয়াজিব আমলের পাশাপাশি নফল নামাজ ও রোজা পালনসহ ইবাদাত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর