উন্নয়ন সহযোগীদের পাশে থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করবে। আমরা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এ জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশের বর্তমান উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের সফলতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যে হার ছিলো ৫৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আমরা সেই দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এখন আমাদের লক্ষ্য।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করছি- সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মতো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও আমরা একইভাবে সফল হব।
দেশকে ‘অমিত সম্ভাবনার দেশ’অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বুকে গতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মতো সব উপায় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের পেলে আমরা আনন্দিত হব।
এসময় তিনি সুষম ও পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে সার্ক, বিমসটেক এবং বিসিআইএম-এ বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুবিধার্থে এ অঞ্চলের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছি। চারটি দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে কিছু অগ্রগতির পরও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিলগুলোর বিপুল সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান শর্তসমূহ কঠিন ও জটিল।
এ সংক্রান্ত তহবিলগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের চাহিদা ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা ও অর্থ ছাড়ের ধীরগতি অপসারণ করতে হবে। তবে আমরা শুধু সাহায্যের জন্য বসে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’গঠন করে মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি জানান, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ ও কারিগরি খাতে পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
অভিবাসীদের কল্যাণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের কল্যাণে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশসমূহকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে যৌথ প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে ২০১০ সালের পর এবারই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম। দুই দিন ব্যাপী চলবে এই সম্মেলন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) মনোনীত প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহ-সভাপতি ওয়েনচাই ঝাং প্রমুখ।
এসএ/এসএইচএস/এএইচ/পিআর