মাগুরায় অ্যানালগ মিটার ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি
মাগুরায় ডিজিটাল মিটার ব্যবহার না করায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রায় চার হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। এরমধ্যে প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার অভিযোগ অন্যতম। ২২ হাজার মিটারের মাধ্যমে মাগুরায় বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেয় স্থানীয় ওজোপাডিকো লি.।
এর মধ্যে ১৮ হাজার মিটার ব্যবহারকারী তাদের অ্যানালগ মিটারকে ডিজিটাল মিটারে রূপান্তরিত করে নিয়েছেন ইতোমধ্যেই। বাকি চার হাজার গ্রাহক এখনো অ্যানালগ মিটার (চাকা মিটার) ব্যবহার করছেন। ফলে প্রতিমাসেই তাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে ভিড় জমাতে হচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরে। এতে একদিকে যেমন গ্রহকরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন অন্যদিকে কর্তৃপক্ষকেও সবকিছু ম্যানেজ করতে হয় কৌশলে। এছাড়া ২/৭ রাশিয়ান মিটার (চাকা মিটার) ও কম্পিউটারে বিল পোস্টিংয়ের সময়ও কিছু ভুল ত্রুটি হয় বলে গ্রহকরা চরম অসুবিধায় পড়েন প্রতিনিয়ত। আর মিটার রিডারদের ভুল পর্যবেক্ষণ যেন গ্রাহকদের মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে।
মাগুরায় প্রতিমাসে সাড়ে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আবার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের প্রাপ্তিও রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও সমস্যার কমতি নেই মাগুরার গ্রহকদের। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যেসব যায়গা দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে সেসব জায়গায় তারের উপর বড় গাছপালা রয়েছে। ফলে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও আবার টানা ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এরমধ্যে শহরতলীর কাঁশিনাথপুর (চারাবটতলা) গ্রামটি অন্যতম।
ওই গ্রামের মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, কয়েকমাস বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও তিনি বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রাইভেট ক্লিনিক, অসাধু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পোস্টার বিদ্যুতের তারে লাগিয়ে রাখার ফলেও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় গ্রাহক ও পথচারীদের। এছাড়া প্রায় ৪০ বছর আগে অপরিকল্পিতভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করায়ও যথাযথভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কারও ফষলি জমির উপর দিয়ে কারও বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে টানা হয়েছে এসব অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক খুঁটির তার। পাল্লা দিয়েই আবার এসব খুঁটি দিয়ে টানা হয়েছে ডিস লাইনের তার। এসব সমস্যারও সমাধান করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
সবকিছু মিলিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের যেন নাভিশ্বাসই শেষ হচ্ছে না।
এসব সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে মাগুরার ওজোপাডিকো লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিমল কান্তি দাশ জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই মাসে বেশ কয়েকজন গ্রাহক তাদের বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে বলে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। তবে তারা প্রত্যেকেই সনাতন বা অ্যানলগ মিটার ব্যবহারকারী। তাদের বহুবার নোটিশ দেয়ার পরও নিজেদের মিটার পরিবর্তন করেন নাই। এ কারণে তারা অ্যানালগ মিটার ব্যবহারকারীদের ব্যবহৃত ইউনিটের উপর আরো ১০ থেকে ১৫ ইউনিট বিল বেশি করে থাকেন। কেননা অ্যানালগ মিটার ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোন ও ৮ ওয়ার্ডের অ্যানার্জি বাল্বসহ ছোটখাট বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র ব্যবহার করলে মিটারে পার্লস ওঠে না অর্থাৎ বিল আসে না।
কিন্তু মাগুরায় চাহিদার সাড়ে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ থেকে আসে ডিজিটাল মিটারের মধ্যমে। ফলে তাদের হিসাব নিকাশ করতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় মাগুরায় গত দুই বছরে নতুন ৪৬টি ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী বছরের শুরুতেই মাগুরায় অন্যান্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প শুরু করবে বলে কাজ হাতে নিয়েছে। সেই সাথে এই কর্মকর্তা অ্যানালগ মিটার (চাকা মিটার) ব্যবহারকারীদের দ্রুত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মিটার প্রতিস্থাপন কারারও পরামর্শ দেন।
মো.আরাফাত হোসেন/এমজেড/পিআর