জমজমাট বাদামতলী-ওয়াইজঘাট ফলের আড়ত
দেশি-বিদেশি ফলের জন্য যুগ যুগ ধরে বিখ্যাত পুরান ঢাকার বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট ফলের আড়ত। রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের ফলের চাহিদার প্রায় সবটুকুই জোগান দিয়ে থাকেন এখানকার আড়তদাররা।
আম, কাঁঠাল, আপেল, মাল্টা থেকে শুরু করে আনার, নাশপতি, কমলা, আঙুর, তরমুজ, পেয়ারা, খেজুর, বরই, লিচু, আনারস, পেয়ারা, নারকেল, কিসমিসসহ সব রকমের দেশি-বিদেশি ফলের সমাহার রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি এই ফলের আড়তে।
তবে শীত মৌসুম চলায় এখন কেবল দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের কমলা, আপেলের রাজত্ব চলছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে সৌদি আরব ও মিশরের খেজুর, চীনের আপেল, কমলা এবং ইরাক, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফল আমদানি করে থাকেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমি ফলও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এনে থাকেন এখানকার আড়তদাররা।
জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জুস কোম্পানিগুলোও পাইকারি দরে এখান থেকে তাদের কোম্পানির জন্য ফল নিয়ে যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাটের উত্তর দিকে বাকল্যান্ড বাঁধের পাশ ধরে ওয়াইজঘাট থেকে বাদামতলী ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রয়েছে হরেক রকমের পাইকারি ফলের আড়ত ও খুচরা ফলের দোকান। বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট এলাকার বিভিন্ন ভবনে ৪০০-৫০০টি ফলের আড়ত রয়েছে। এছাড়া বুড়িগঙ্গা পাড়ে রাস্তার দুপাশে বিনাস্মৃতি স্নান ঘাট থেকে বাদামতলী ঘাটের শেষ মাথা পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি খুচরা ফলের দোকান রয়েছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে বেলা ১টা পর্যন্ত ১০০-১৫০টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ফল নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখানে জড়ো হন। এছাড়া ঢাকা ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে খুচরা বিক্রেতারাও এসে ভিড় জমান এখানে। এখানকার আড়তগুলোতে এক ক্যারেটের (২০ কেজি) নিচে ফল বিক্রি করা হয় না।
ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, দিনে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার ফল বাণিজ্য হয় এই আড়ত থেকে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, বাদামতলী ও ওয়াইজঘাটে ফলের বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে চলে হাজার মানুষের জীবিকা ও সংসার। ভোর হলেই বুড়িগঙ্গার পাড়ে শুরু হয় পণ্যবাহী পরিবহন থেকে মালামাল খালাস করার কার্যক্রম। এরপর আবার শুরু হয় সেখান থেকে ট্রাক ও লঞ্চে করে সারাদেশে ফল সরবারাহ।
পণ্যবাহী এই ট্রাকগুলোতে মালামাল ওঠানো এবং নামানোর কাজ করেন শ্রমিকরা। চুক্তিতে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির কাজ করে থাকেন শ্রমিকরা। তবে ব্যবসা খারাপ হলে কোনো কোনো সময় তারা ৩০০-৪০০ টাকায়ও কাজ করতে বাধ্য হন।
এছাড়া ট্রাক থেকে নামানোর সময় পড়ে যাওয়া ও আধাপচা ফলগুলো কুড়িয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন হকাররা। ওয়াইজঘাটের বাসিন্দা রহিমা ট্রাকের পাশে বসেই এরকম ফল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ, এখান থেকে আড়তদারদের ফেলে দেয়া ফল কুড়িয়ে নিয়ে পরে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি।
মেসার্স হুমায়ুন ফ্রুটস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী বলেন, শীতকাল হওয়াতে ফলের দাম কিছুটা কম। এখন মৌসুমি ফলের সমাহারও কম। দেশি ফলগুলোর চাহিদা বেশি- বিশেষ করে আপেল, মাল্টা, কমলা, আনার, পেয়ারা, কুল। এই মৌসুমে কমলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি তাই কমলার সর্বোচ্চ জোগান রয়েছে। কিছু কিছু ফলের ক্ষেত্রে কাস্টমাররা দেশি ফলের প্রতি বেশি চাহিদা দেখায় ফলে সেটা জোগান দেয়া সম্ভব হয় না। রমজান আসলে আমরা দেশি-বিদেশি ফলসহ সবধরনের ফল ভালো বিক্রি করতে পারি।
মেসার্স আরিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার বলেন, লকডাউনে আমাদের অবস্থা খারাপ ছিল। প্রচুর ফল নষ্ট হতো। এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর ফল আসছে আড়তে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হিমাগার সংকটের কারণে মাঝে মাঝে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যায়। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে ক্রেতারা কম দামে ভালো জিনিস পাবে আশা করি।
রায়হান আহমেদ/এমআরআর/এমকেএইচ