ফিরিয়ে আনা হলো ঘাতক নূর হোসেনকে


প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রাত ১১টা ৩২ মিনিটে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৮৯২৮ নম্বরের একটি নেভি ব্ল মাইক্রোবাসে করে তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে তাকে কোনো কথা বলতে দেয়া হয়নি। প্রশাসনেরও কোনো কর্মকর্তা কোনো কথা বলেননি। নূর হোসেনকে হস্তান্তর করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাছে। এর আগে ভারতের দমদম জেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল কলকাতা-যশোর রোড ধরে বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল সীমান্তে রওনা দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের দলটি ভারতীয় চেকপোস্ট আসে। এর পর বিজিবি-বিএসএফ বেনাপোল চেকপোস্ট বিজিবি ও পেট্রাপোল বিএসএফ ক্যাম্পে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা যায়।


রাত ১০টার দিকে ভারতীয় বিএসএফের ৪০ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল কে এস শুকলা বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন। বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ মিনিট পর আবার ভারত সীমান্তে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম ও পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান। তারাও ১০ মিনিট পর ফিরে আসেন। এর পর রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৮৯২৮ নম্বরের একটি মাইক্রোবাস প্রবেশ করে ভারতীয় নোম্যান্সল্যান্ডের ভারতীয় অংশে।

তার ১০ মিনিট পর পেট্রাপোল চেকপোস্টে প্রবেশ করে পোর্ট থানা, ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি ও গোয়েন্দা বিভাগের ৬ জন কর্মকর্তা। ১১ টা ৩২ মিনিটে ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা নুর হোসেনকে তাদের কাছে হম্কান্তর করেন।  এর আগে ৭টার দিকে চেকপোস্টের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় বিজিবি ও কাস্টমস। চেকপোস্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বাইরের কাউকে চেকপোস্ট এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।


বৃহস্পতিবার রাতের যেকোনো সময় নূর হোসেনকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে বিকেলের দিকে খবর আসার পরপরই স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও অধীর অপেক্ষায় থাকেন। নূর হোসেনকে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে এ খবর সরকারি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা স্বীকার করতে চাননি। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নূর হোসেনকে বেনাপোল দিয়েই হস্তান্তর করা হবে।

ভারতীয় পুলিশ নূর হোসেনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় বিএসএফের ৪০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্ণেল কে এস শুকলা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিএসএফ তাকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। বিজিবি তাদের নিরাপত্তা দিয়ে বেনাপোল থেকে যশোর নিয়ে যাবে বলে জানা গেছে। তাকে সরাসরি নারায়নগঞ্জ নিয়ে যাবে সড়কপথে না আকাশ পথে এটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না।


তবে নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন জানান, প্রক্রিয়া শেষ করে তাকে (নূর হোসেন) দেশে পুশব্যাকের পরেই সরাসরি নারায়ণগঞ্জ আনা হবে। কারণ নারায়ণগঞ্জ আদালতে তার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক. যশোর বিজিবির উপঅধিনায়ক মেজর লিয়াকত আলী, যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রাব্বী হাশমি, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান, ইমিগ্রেশন ওসি তরিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা চেকপোস্টে অবস্থান নেন।


অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের পরপরই নূর হোসেনকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করা বলে ভারত সরকারের কাছ থেকে আভাস পাওয়া যায়। এর আগে বুধবার সকালে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সরকার নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তির পর নূর হোসেনই প্রথম ব্যক্তি, যাকে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হলো।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।


হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে নিরুদ্দেশ হন নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়।

গতবছর ১৮ আগস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম ও খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগণার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেয়ার আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী গত ১৬ অক্টোরবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ পরিষ্কার করেন।

জামাল হোসেন/এআরএ/আরএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।