আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার, জড়িত শতাধিক ব্যক্তি : দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

কানাডার বেগম পাড়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের সঙ্গে শতাধিক ব্যক্তি জড়িত এবং পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। তবে পাচারকৃত এই টাকা ও ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। দুদক ছাড়া আরও চারটি সংস্থা এমন প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন আদালতে।

রিপোর্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অর্থপাচারের তথ্য দিতে সব মিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে তা আদালতে দাখিল করা হবে। আর কানাডার বেগম পাড়ায় অর্থপাচারের বিষয়ে সে দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘হিসেবে করেছি। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, এখানে শতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন এবং প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো লন্ডারিং। তবে, এই টাকাটাই শেষ না। কারণ যে মামলাগুলো ইনকোয়ারি এবং ইনভেস্টিগেশনে আছে সেখানে টাকার পরিমাণ, মানুষের পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। তবে আজকে পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত আমরা আদালতে দাখিল করেছি তাতে আমার হিসেবে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং শতাধিক ব্যক্তি এখানে জড়িত।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সম্রাটসহ সাতজন এবং এক হ্যাকারসহ আটজনের অর্থপাচারের তথ্য দাখিল করেছে তারা। এছাড়া এনবিআরও রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর সেটি আমলে নিয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চেয়েছেন। আজকের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) কানাডার বেগমপাড়ায় অর্থপাচারকারীদের তালিকার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ফেরত আনা হয়েছে ৪১ কোটি টাকা

মানিলন্ডারিংয়ের দুই মামলায় এখন পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া দুই ব্যক্তির প্রায় ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়া দুই ব্যক্তির ইংল্যান্ডে থাকা ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯১ পাউন্ড এবং এক ব্যক্তির হংকংয়ে থাকা ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার আদালতের আদেশের মাধ্যমে ফ্রিজ করা হয়েছে।

হাইকোর্টে দেয়া প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে দুদক। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদক ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধে ৪৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।

অপরদিকে ৮৮টি মামলা তদন্ত করছে দুদক। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলায় চার ব্যক্তির বিদেশে অর্থ/সম্পদ/ফ্রিজ/অবরুদ্ধ করা ও ফেরত আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৯ সালের কাফরুল থানার এক মামলায় পাচারকৃত প্রায় ২১ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে। এছাড়া একই সালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এক মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা ফেরত এনে রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা করা হয়েছে।

২০১৪ সালে রমনা থানার মামলায় ব্রিটেনে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আট লাখ আট হাজার ৫৩৮ পাউন্ড ফ্রিজ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে গুলশান থানার এক মামলায় মোরশেদ খানের ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালের ক্যান্টনমেন্ট থানার এক মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের চার লাখ ১৮ হাজার ৮৫৩ পাউন্ড ফ্রিজ করা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর সেটি আমলে নিয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চেয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

আদালতে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমরা ২০২০ সাল পর্যন্ত ডাটা দিয়েছি।’ তখন আদালত বলেন, ‘এগুলোতো আগে করছেন। ...পুরাতন কাহিনী বলে তো লাভ নেই।’ তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমরা লেটেস্ট যতগুলো করেছি সবগুলোর ডাটা দিয়েছি। আপনাদের সামনে দেয়া হয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘২২ তারিখের পর (২২ নভেম্বর) কী করছেন?’

তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘২২ তারিখের পর সমস্ত ডাটা যোগ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।’ আদালত বলেন, ‘কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?’ জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, ‘টিল টুডে আমরা কী করেছি, সেটা দিয়েছি।’ আদালত বলেন, ‘এসব তো আগের তালিকা, সবই পরাতন নাম। আমরা নতুন তালিকা চাই।’

এ সময় উচ্চ আদালতের আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশের টাকা পাচারকারীদের বিচার না করা গেলেও, নামগুলোও কি জাতির সামনে তুলে ধরা যাবে না?’

এক পর্যায়ে আদালত আরো বলেন, ‘এরাতো দেশের মধ্যেই আছে। বাইরের তো কেউ নেই।’ এরপর আদালত টাকা পাচারকারীদের বিষয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তথ্য জানাতে বলেছেন।

এফএইচ/এমআরআর/ইএ/জেআইএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।