ভোলার ২০ দ্বীপে আজও গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার


প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৫

আজ ভয়াল ১২ নভেন্বর। ভোলাসহ উপকূলীয়বাসীর কাছে শোকের ও আঁতকে ওঠার দিন। ১৯৭০ সালের এ দিনে মারা যায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। ভেসে গেছে হাজার হাজার জনপথ। ভোলা শহরের ওবায়দুল হক মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. বাছেদ তার পরিবারের ছয়জনের মধ্যে ওই দিন মা, বাবা, ভাই বোনসহ পাঁচজনকেই হারান। এমন স্বজনহারা শতশত পরিবার আজও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দিনটি স্মরণের পাশপাশি উপকূলের চরাঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। ৭০’র এ গোর্কির আঘাতে জলচ্ছ্বাসে মনপুরাসহ ভোলা জেলার বেশিরভাগ এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। প্রাণহারায় দুই লাখ মানুষ। একের পর এক জলচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় আর বৈরি প্রকৃতির সঙ্গে মোকাবেলা করে এ অঞ্চলের মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

কিন্ত আজও নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় সাইক্লোন শেল্টার। গবাদি পশুর জন্য তৈরি হয়নি মাটির কিল্লা। ভোলার ২০টি চর-দ্বীপে বসবাসকারী তিন লাখ মানুষের জন্য দুর্যোগকালে আশ্রয় নেয়ার মতো তেমন কোনো শেল্টার পর্যন্ত নেই। তাই নভেম্বর মাসে আকাশে কালো মেঘ দেখলেই এ অঞ্চলের মানুষ আঁতকে ওঠে। আবার বুঝি ৭০ এর ওই ভয়াল দিনটি আসছে।

সিডর কিংবা রেশমি, আইলা কিংবা অতি জলোচ্ছ্বাসের ছোবল ছাপিয়ে যেতে পারেনি ৭০’র গোর্কির ছোবলকে। এ অঞ্চলের মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি সেই গোর্কির চিহ্ন। বয়স ৫০ ঊর্ধ্ব যেকোনো মানুষ এখনো স্মৃতি আওড়ান। স্বজন হারানোর ব্যথায় আকড়ে ওঠেন। অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ৭০ এর গোর্কির কথা আবহাওয়া দফতর আগে জানাতে পারেনি। ভোলায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যু, লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া জনপদের খবর পাঁচদিন পর রাজধানীর ঢাকার মানুষ জানতে পারে।

সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলায় ওই দিন কী ঘটেছিল তা বাইরের অঞ্চলের মানুষ বুঝতেই পারেনি। তৎকালীন দৈনিক পূর্ব দেশের প্রতিনিধি বর্তমানে দৈনিক বাংলার কণ্ঠের সম্পাদক প্রেস ক্লাব সভাপতি  হাবিবুর রহমান তার ক্যামেরায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া এই জনপদের ছবি ও সংবাদ নিয়ে তার আত্মীয় খলিলুর রহমান ট্রলারযোগে চারদিন পর ঢাকায় পৌঁছান, যা পূর্ব দেশে ছাপা হলে আঁতকে ওঠে সারাদেশের মানুষ।

সরকারি হিসাবে ওই সময় ভোলাতেই মারা গিয়েছিলেন এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বিধ্বস্ত হয় ৮১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয় চার লাখ বাড়ি, তিন হাজার স্কুল, ডুবে যায় ২০ হাজার মাছ ধরার নৌকা, ফসল বিনষ্ট হয় পাঁচ লাখ টন। সে দিনের এই ধ্বংসযজ্ঞের কথা বলতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হন সাবেক কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার ভবরঞ্জন মজুমদার। ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন আজাদ, প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহেরের মতো অসংখ্য মানুষ।

ঝড়ের দিন সন্ধ্যার পর টিপ টিপ বৃষ্টিতে ক্রমেই বাতাস বাড়তে থাকে। রাত ১২টা না বাজতেই বাতাস যেন দৈত্য দানবের মতো ভেঙেচুরে আসতে থাকে। অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের স্মৃতিতে সেই বিভীষিকাময় দুর্যোগের কথা রয়ে গেছে। ভোলা শহরের পার্শ্ববর্তী রতনপুর বাজারেও ঝড়ের পরদিন দেখা গেছে লাশ আর লাশ। ভেসে আসা লাশ জড় করে সরকারি পুকুরপাড়ে গণকবর দেয়া হয়েছিল।

বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী ওই সময়ের ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ ছুটে আসেন। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন সাবেক মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহানসহ স্থানীয়রা।

ভোলার সাত উপজেলায় গণকবরের সংখ্যা ছিলো সহস্রাধিক। যা আজো স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। দিনটি স্মরণে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।