জাবিতে বিভিন্ন বিভাগে ফল প্রকাশে বিলম্ব, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনার্সের (স্নাতক-সম্মান) বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘ সূত্রিতার আশ্রয় নিচ্ছে কয়েকটি বিভাগ। ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাস ১৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম থাকলেও তা না মেনে ৮/৯ মাস পর্যন্ত বিলম্ব করছে বিভাগগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নৃবিজ্ঞান বিভাগের চারটি বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় নয় মাস আগে (২৩ মার্চ সমাপ্ত হয়)। জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে পার হয়েছে প্রায় নয় মাস (২৪ মার্চ সমাপ্ত হয়)। ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে (১৫ এপ্রিল সমাপ্ত হয়), দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ছয় মাস আগে (১১ মে সমাপ্ত হয়), তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় প্রায় সাত মাস আগে (২৭ এপ্রিল সমাপ্ত হয়)।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে (২৩ মে সমাপ্ত হয়), ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে যথাক্রমে ছয় মাস ও প্রায় পাঁচ মাস আগে (যথাক্রমে ৫ মে ও ১৬ জুন সমাপ্ত হয়)।
যথাসময়ে ফল প্রকাশিত না হওয়ায় এসব বিভাগের অনার্স শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা বিসিএস ছাড়া অন্য কোনো চাকরির আবেদন করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও আবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সামনে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির বিজ্ঞপ্তি অংশগ্রহণ না করতে পারার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করতে পারছেন না।
উপরোল্লিখিত এসব বিভাগের সঙ্গে একই সময়ে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনার্সের সার্টিফিকেটও পেয়ে গেছেন । এমনকি গত বছর অনুষ্ঠিত চতুর্থ সমাবর্তনেও অংশ নিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১০-১২ সাল পর্যন্ত সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের প্রশাসনের উপর জোর তদারকি থাকায় তখন সঠিক সময়ে প্রত্যেকটি বিভাগ ফল প্রকাশ করতো বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ফল প্রকাশে এই ধরনের অস্বাভাবিক বিলম্ব হওয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা ঠিক মতোই নেন। যথাসময়ে রেজাল্টও দিয়ে দেন। এমনকি সান্ধ্য কোর্সের ক্লাস-পরীক্ষাও ঠিক মতো নেন, রেজাল্টও সঠিক সময়ে দেন। আমাদের বেলায় যতো সময়ক্ষেপণ। আমাদের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে উনাদের কোনো দায়বোধ নেই।’
ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া সম্পর্কে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান তানিয়া শারমীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগে ফল প্রকাশে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমন বলেন, ‘ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের কোনো দায় নেই। শিক্ষকরা আমাদের কাছে মার্কস পাঠালে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের মাধ্যমে রেজাল্ট তৈরি করে বিভাগে পাঠিয়ে দেই। যেসব বিভাগ বিলম্ব করে তাদেরকে আমরা বারবার স্মরণ করিয়ে দেই। তারপরও কাজ না হলে প্রশাসনকে অবহিত করি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টা তদারকি করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
এদিকে শিক্ষকদের এসব আচরণকে অনৈতিক বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। জাবি শাখা ছাত্রফ্রন্টের সম্পাদিকা সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, ‘শিক্ষকদের এসব আচরণ সম্পূর্ণ অনৈতিক। এসব বিষয়ের সমাধান হওয়া জরুরি। শিক্ষকরা কোন কোন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় এগুলো ঘটছে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে।’
হাফিজুর রহমান/বিএ