পাটগ্রাম সীমান্তে দেখা মিলল হাসি-কান্নার খেলা


প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৫

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের জুম্মারপাড় সীমান্তের নদী-নালা ও চা বাগান পেড়িয়ে প্রিয়জনদের এক নজর দেখতে সকাল থেকে ভিড়জমায় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে।

শ্যামাপূজা উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাটগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের দু‘পাড়ে বসে হাজারও মানুষের মিলন মেলা। এসময় স্বজনদের দেখে উভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁটাতারের বাধায় স্বজনদের ছুঁয়ে দেখতে পারেনি অনেকে।

প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে হাসি-কান্নার পরিণিত হয় কাঁটাতারের মিলন মেলাটি। আর স্বল্প আয়ের মানুষজনকে এমন সুযোগ দেয়ায় কারণে অনেকেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দু‘দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতি।

Patgram

জানা গেছে, প্রতিবছর শ্যামাপূজার পরের দিন জুম্মারপাড় সীমান্তের ও ভারতের কুচবিহার জেলার কুচলিবাড়ি থানার ব্রাম্মপাড়া ও ডাকুয়ারটারী সীমান্তে কাঁটাতারের দু‘পাড়ে মেলা বসে। সকাল ৮টা থেকে মিলন মেলা চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে ধীরে ধীরে অসংখ্য মানুষজন ছুটে আসেন ওই কাঁটাতারের কাছে। ওপারের বিভিন্ন এলাকা থেকেও একইভাবে জড়ো হয় হাজারও স্বজন। মাঝখানের কাঁটাতারের কারণে কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে না পারলেও আনন্দের কমতি ছিল না স্বজনদের মাঝে।

এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের গেট খুলে দিলে উভয়ের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করতে দেখা যায়।

Patgram

মেলায় এসেছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাপানীর তারামনি (৩৫) ও মায়া রানী (৪০)। কাঁটাতারের ওপারে থাকা ভারতের অলিপুর এলাকার দিদি বিজলী রানীকে (৩৮) তিনি বলছিলেন, দিদি খুব ইচ্ছে ছিল তোর কাছে গিয়ে একটু জড়াইধরি। কিন্তু তা না পারলেও এত বছর পর তোকে দেখে আমার মনের সব কষ্টই যেন দূর হয়ে গেছে।

ভারতের কোচবিহার জেলার অলিপুরে বিয়ে হওয়া বাংলাদেশি মেয়ে বিজলী রানী মুহুর্তেই কেঁদে ওঠেন।

এদিকে ভারত-বাংলাদেশের স্বজনদের ওই মিলন মেলায় কান্নার পাশাপাশি খুশির শেষ ছিল না অনেকেরই। বহু বছর পর প্রিয়জনদের মাঝে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ায় অনেকেই শান্তির জোয়ারে ভাসছিলেন।

Patgram

ভারতে থাকা নাতি সঞ্জিবকে কাঁটাতারের ওপারে দেখে ও কথা বলতে পেরে হাতীবান্ধার ধওলাই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ পেড়ি মোহন বলেন, আমরা গরীব মানুষ তাই পাসপোর্ট ও ভিসা করে ভারতে যাওয়ার মতো সামর্থ নাই। এভাবে প্রতিবছর আমাদের একটু দেখা করার সুযোগ দিলে ওটুকুই হবে আমাদের একমাত্র স্বান্তনা। এ কথা শুধু পেড়ি মোহনেরই নয়, বুধবার কাটাতারের ওই মিলন মেলায় ছুটে আসা প্রায় সবারই। তারা প্রতিবছর এমন সুযোগ অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
 
রবিউল হাসান/ এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।