ভালুকায় বইছে পৌর নির্বাচনের হাওয়া
স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ভোটারদের মাঝে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনী আলোচনার আড্ডা জমে উঠেছে পৌর এলাকার অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে।
এ বছর ভালুকা পৌরসভার নির্বাচন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে মহাজোট ও অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যক্তিগত অর্জিত ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে বিব্রতবোধ করছেন। প্রার্থীরা ভোটারের পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ড ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এ বছর কাউন্সিলর প্রার্থী কম হবেন বলে অনেকেই আশা করছেন।
জানা যায়, এ বছর ভালুকা পৌরসভা নির্বাচনে আ. লীগ থেকে ৫ জন ও বিএনপি থেকে ২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আ. লীগ থেকে বর্তমান মেয়র ডা.একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম, সাদিকুর রহমান তালুকদার, আলহাজ ওমর ফারুক মাস্টার, সাবেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার ও জাহিদ হাসান বুলবুল।
বিএনপি থেকে সাবেক মেয়র আলহাজ মফিজ উদ্দিন সরকার ও আলহাজ হাতেম খান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রার্থীর তোরণ, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও প্যানা দিয়ে ছেয়ে গেছে। এ সকল পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
দলীয় প্রতীকে এবারের নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্নভাবে লিয়াজু করে যাচ্ছেন। কে হবেন দলীয় প্রার্থী এ নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই এখন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তারা নির্বাচন করবেন না এমনটিই জানিয়েছেন। দু’দলের তিন প্রার্থীর ব্যক্তিগত বেশ ভোট রয়েছে। তারা দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে ফলাফল পাল্টে যেতে পারে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যদি দু’দল থেকে বুঝে শুনে প্রার্থী দিতে পারেন তাহলে হড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ভালুকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়র আলহাজ মফিজ উদ্দিন সরকার পর পর দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ভালুকা সদর ইউনিয়নের ৪ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ২০১০ সালের পৌর নির্বাচনে তাকে হারানো হয়। আলহাজ হাতেম খান দীর্ঘদিন যাবত পৌরসভায় গরীব, দুঃখী, অসুস্থদের চিকিৎসা ও মসজিদ মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান খয়রাত করে ভাল একটি অবস্থানে রয়েছেন। বিএনপির এ দুই সম্ভাব্য প্রার্থীই খুবই শক্তিশালী।
আ. লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান মেয়র ডা.একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম গত ৫ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সাধ্যমত মূল্যায়ন করায় এবং দীর্ঘ সময় বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ায় এলাকায় তার বেশ কিছু ব্যক্তিগত ভোটার রয়েছে। ভালুকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাদিকুর রহমান তালুকদার বর্তমান এমপি অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্যাহর আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি।
ভালুকা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আলহাজ ওমর ফারুক মাস্টার পৌরসভায় অনেক ছাত্রী, অভিভাবক থাকায় এবং ৮, ৯নং ওয়ার্ডের ভোট ব্যাংক ও দলীয় ভোটকে সম্বল করে প্রার্থী হচ্ছেন।
আলহাজ মফিজ উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আমি ইউনিয়নে ৪ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম এবং পৌরসভায় ২বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। গত ২০১০ সালের নির্বাচনে দিন দুপুরে ভোট লুট ও ডাকাতি করে আ. লীগের লোকজন আমাকে হারিয়েছে। এবার হতে পারে আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।
আলহাজ হাতেম খান জাগো নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত পৌরসভার ভোটারদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে আছি। হতদরিদ্র, অসুস্থ, দুস্থ, গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করে আসছি। বিভিন্ন উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গবীরদের চাল, চিনি, শাড়ি, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে আসছি। দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত নিয়েই নির্বাচনে নেমেছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে ইনশাল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হবো।
বর্তমান মেয়র ডা. একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত ৫ বছর মেয়র থাকাকালীন দলমত নির্বিশেষে জনগণের সেবা ও সহযোগিতা করে আসছি। দলের বাইরেও আমার অনেক ভোটার রয়েছে যারা আমাকে পছন্দ করেন। পৌরসভার ভোটাররা এবারও আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চায়।
সাদিকুর রহমান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা তফির উদ্দিন তালুকদার একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার সন্তান ও তরুণ সমাজ সেবক হিসেবে আমি পৌরসভার জনগণের সেবা করতে চাই। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকার জয় অক্ষুণ্ন রাখবো।
আলহাজ ওমর ফারুক মাস্টার জাগো নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ভালুকা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। সেই সুবাদে পৌরসভায় রয়েছে আমার অনেক ছাত্রী ও অভিভাবক। পাশাপাশি আমি ৮নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছি। সেই ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ডে বিশাল ভোট রয়েছে। এ ওয়ার্ড দুটির ভোটারগণ যদি ইচ্ছে করে তাহলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হবো।
এসএস/পিআর