একটা, জাস্ট একটা সাবজেক্ট পেতে চাই


প্রকাশিত: ০৮:২৫ এএম, ১০ নভেম্বর ২০১৫

ভর্তি পরীক্ষা এখন ভর্তি পরীক্ষা নেই, এটা এখন ছাটাই পরীক্ষা। একটি শিক্ষার্থীকে কত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সুযোগ পেতে হয়, তা আমরা ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা দেখলেই বুঝতে পারি। আমার এখন একটাই ইচ্ছা, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। একটা, জাস্ট একটা সাবজেক্ট পেতে চাই।

এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানালেন রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলা থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শাকির আহমেদ। শুধু শাকির নয় এমন অনুভূতির প্রতিচ্ছবি প্রায় ভর্তিচ্ছুর চোখে-মুখে।

কথা হয় রংপুর থেকে আসা মো. হাবিব নামের এক ভর্তিচ্ছুর সঙ্গে। তিনি আবেগি হয়েই জাগো নিউজকে জানান, আমি রংপুর থেকে এসেছি। আমার বাবা একজন কৃষক। আবার বাবার মতো আমারও ইচ্ছা আমি যেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারি। আমাকে বাবা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছেন। আমি আমার বাবার মান রাখতে চাই। কথাগুলো বলতে বলতে চোখে জল এনেই ফেললেন হাবিব।
 
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় চার হাজার ৭২২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৮২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ভর্তিচ্ছুদের আগমনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীতে বিরাজ করছে বাড়তি চাপ। নতুন মুখের আগমনে রাবিও পেয়েছে এক অন্য রকম প্রাণ। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকতো আছেনই। ছোট-বড় সব বয়সের মুখের আগমনে রাবি এখন পরিপূর্ণ। ৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ভর্তি পরীক্ষা চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।

ru

তবে এই ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ভোগান্তিরও শেষ নেই ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদেরও। রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সিরাজুচ সালেকীন বলেন, তার ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, আমি স্টেশন থেকে ব্যাটারিচালিত অটোতে উঠে বিনোদপুরে আসার পর অটোওয়ালা আমার কাছে ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা ভাড়া চাইলেন। একপর্যায়ে আমার সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা লেগে যায় তার। নতুন মানুষ দেখে তারা ব্যবসার ফন্দি এঁটেছেন।

শুধু ভাড়া নয় খাবারের মানেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। সঙ্গে সঙ্গে খাবারের দোকানগুলোও। এসময় খাবার বিক্রি বেশি হওয়ায় যতটুকু সম্ভব বিক্রেতারা তাদের দোকানের পরিধি বাড়িয়েছেন।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার, কাজলা বাজার, স্টেশন বাজারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত সকল খাবারের দোকানসমূহ আকর্ষণীয় করা হয়েছে। প্রায় দোকানে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত কর্মচারী।

রাবির স্টেশন বাজারের এক দোকানদার বলেন, এখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় সবাইকে যাতে আমার খাবার সরবরাহ করতে পারি সেজন্য জায়গা ও কর্মচারী বাড়িয়েছি।

এই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে সকল ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে নিচ্ছেন লাভের অঙ্কটিও। কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরের এক দোকানদার জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভর্তি পরীক্ষার সময় দ্বিগুণ বেচাকেনা হয়। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য সময় প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হলে, এই সময় তার দ্বিগুণ হয়ে যায়।

ru

তবে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এখন অতিরিক্ত খাবার তৈরি হওয়ার কারণে খাবারের মানও ঠিক নেই। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে হোটেলগুলোতে নোংরা পানি পরিবেশন করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

সামিউল আসাদ নামের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়াতে দুপুরে খাবার খেতে গিয়ে দেখি, সেখানে খাওয়ার অযোগ্য নোংরা পানি পরিবেশন করা হচ্ছে। কর্মচারীদের পানির বিষয়ে অভিযোগ করলেও তারা কোনো তোয়াক্কা করছেন না।

কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে ময়লাযুক্ত পানি পরিবেশন করার বিষয়ে জিজ্ঞেসা করলে মো নাসির হোসেন নামের এক কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, পানির ভেতরে মলো তো থাকবেই। তাতেতো খুব বেশি সমস্যা নেই।

রাবি কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার অফিস সহকারী মো. মিজানুর রহমান চপল জাগো নিউজকে বলেন, আসলে পানির ট্যাংকটি পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু এখন পরিষ্কার করা হলে কয়েকদিনের জন্য এখানে পানির সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাই ভর্তি পরীক্ষার পরেই ট্যাংকটি পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক প্রফেসর ড. মো. অহিদুল ইসলাম ব্যস্ত থাকায় পরে যোগাযোগ করতে বলেন।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।