টিআইবিকে সংসদের বিশেষ অধিকার কমিটিতে হাজির করার দাবি


প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৫

বর্তমান জাতীয় সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলে মন্তব্য করার জন্য টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটিতে তলব করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।

সংসদে সোমবার রাতে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা টিআইবির গত ২৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ দাবি জানান।  

আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সদস্যরা সংসদ সম্পর্কে টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যকে ধৃষ্টতাপূর্ণ, সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্ণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তিনদিনের মধ্যে টিআইবিকে নিশর্ত ক্ষমা চাওয়ার সময়সীমা বেধে দিয়ে বলেন, অন্যথায় কমিটিতে নিরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান ‘ফরেন ডোনেশন বিল’ এ  বিধান সংশোধন করে সংসদ আইন পাস করে টিআইবিকে সাসপেন্ড করা হতে পারে মর্মে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বক্তব্যের সূচনা করেন। পরে সুরঞ্জিতসেন গুপ্ত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টির কাজী রশীদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী. জাসদের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল বক্তব্য রাখেন।

টিআইবি ওই দিন তাদের ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আহুত সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সংসদ সম্পর্কে মন্তব্য করে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে। এটা জাতির প্রত্যাশা ছিল না। সার্বিকভাবে সংসদের কার্যক্রমে আমরা হতাশ। একটি দল বা জোট, যাদের সংসদে উপস্থিতি নেই, তাদের নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। প্রতিপক্ষের সমালোচনা আগের সংসদের চেয়ে ১২ গুণ বেড়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের বিতর্কিত মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ ও সমালোচনা করে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, টিআইবি কি সমস্ত আইনের ঊর্ধ্বে? দেশের পার্লামেন্ট সরকার সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তাহলে রাষ্ট্র সরকার কি টিআইবির কাছে এতোই অসহায় ? টিআইবিও  আইনের অধীন, সংবিধানের অধীন, পার্লামেন্টের অধীন। এর এক ইঞ্চি বাইরে যাওয়ার অধিকার নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক সংসদীয় কমিটিতে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আর সংসদকে বলেছেন ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’। তাহলে আপনারা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা কি বাদর নাচের অন্তর্গত? সেটা কি বাদরনাচ ছিল? আপনারা যেই হোন যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে অপরাধী হবেন। সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালা বলে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন।

সুরঞ্জিত বলেন, ড. ইফতিখারুজ্জামানকে তিনদিন সময় দিতে চাই। তাকে এই সময়ের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এই মর্মে যে জীবনেও কোনো দিন সংবিধান ও পার্লামেন্ট সম্পর্কে এমন কথা বলবেন না। যদি সংবিধান ও পার্লামেন্টকে কটাক্ষ করে কথা বলেন তাহলে সেই টিআইবি এনজিওর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, একটি নির্বাচন হয়েছে। তখনকার বিরোধী দল নির্বাচনে আসেনি। তা নিয়ে কথাবার্তা থাকতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে সংসদকে পুতুল নাচের রঙ্গশালা বলে বসলেন তারা। সমন্ত এনজিওদের বলতে চাই, যদি সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অপরাধ করা হয় তাহলে এই অপরাধে সংসদ, সংবিধান যদি সাসপেন্ড করে দেয় আমার বলার কিছু নেই, প্রধানমন্ত্রীরও কিছু বলার থাকবে না।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, টিআইবি যে মন্তব্য করেছে তা এখতিয়ার বহির্ভূত। এই মন্তব্য করেছে যখন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তাকে চ্যাম্পিয়ান অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। সেই সময় দুই বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরে কোনো কোনো দূতাবাস অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আমি বলেছিলাম অতি রিয়েকশন জঙ্গিদের উৎসাহিত করবে। ঠিক তার পরের দিনই জাপানিকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন লেখালেখি হচ্ছে তখন টিআইবি বিরোধী দলকে পতিত বিরোধী দল বলেছে। শেষে বলেছে, এই সমস্যার সমাধান হবে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে। আমরা কি এটা বলতে পারি না এইসব পরিস্থির সৃষ্টি করা হয়েছে একটি নির্বাচনের জন্য। আমি বলেছি টিআইবি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন।

তিনি বলেন, টিআইবিকে সংসদের অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে সমন করে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে। তারা কোথা থেকে টাকা পায় কোনো জবাবদিহীতা নাই। তাদের একটাই কাজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। আমাদের অগ্রগতি যাতে বাধাগ্রস্ত হয় সেজন্য টিআইবির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে। একটাই কারণ যাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। কোনো শক্তিই অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

কাজী ফিরোজ রশীদ চৌধুরী বলেন, টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডে যারা আছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী পন্থীরাই বেশি আছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে যারা ছিলেন তারা তাকে রক্ষা করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তারা তার পাশে ছিলেন। এই বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে।

মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, এই ধরণের শিক্ষিত লোকগুলো এভাবে নির্ভেজাল মিথ্যা কেন বলছে। আমাদের এখন যে গণতন্ত্র আছে তা ভারতের গণতন্ত্র থেকেও শক্তিশালী।

ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, টিআইবিকে বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত কমিটিতে ডাকা হোক। তাহলে তারা জবাবদিহী করতে বাধ্য হবে। কিন্ত তারা জবাব দিতে পারবে না।

এইচএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।