স্বামী হত্যার বিচার না দেখেই চলে গেলেন আসমা কিবরিয়া


প্রকাশিত: ০৯:২০ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৫

জীবনের শেষ বেলার আকুতি ছিল স্বামী হত্যার বিচার দেখে যাওয়া।স্বামীর দশম মৃত্যুবার্ষিকীতেও গণমাধ্যমের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ঘটনার ১০ বছর পর বিচারকার্য শুরু হলেও এর শেষ দেখে যেতে পারলেন না সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার স্ত্রী বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া।

জীবনের শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেই নিয়তির ডাকে চলে গেলেন আসমা কিবরিয়া। সোমবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন।হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান ওই রাতেই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।

প্রায় দশ বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৩ সেপ্টম্বর বিচারকার্য শুরু হয়। তিন দফা তদন্তের পর ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা আরিফুল ইসলাম এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম যোগ করে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ২০০৫ সালে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।চার দলীয় জোট সরকারের আমলে হারিছ চৌধুরী একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।অপরদিকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নান ২০০১ সালে  পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

সাবেক আমলা কিবরিয়া ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এই অর্থনীতিবিদ।

কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্যে শুরু থেকেই জটিলতা দেখা যায়। কয়েক দফা তদন্ত হওয়ার পরেও এই বিচারকার্য শুরু হতে প্রায় দশ বছর সময় লেগে যায়।বিচারের অনিশ্চিয়তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বারবার বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন কিবরিয়ার সদ্য প্রয়াত স্ত্রী আসমা কিবরিয়া। বিচারের অমন অনিশ্চিয়তা নিয়েই চলে গেলেন শিল্পী আসমা কিবরিয়া।

কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রেও ‘আসল অপরাধীদের` আড়াল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল তার। স্বামীর হত্যার বিচারের দাবিতে ‘শান্তির জন্যে নীলিমা’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছিলেন তিনি।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আসমার টিউমার অপসারণ করা হয়েছিল আসমা কিবরিয়ার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। কিবরিয়ার দম্পত্তির একমাত্র ছেলে রেজা কিবরিয়া একজন অর্থনীতিবিদ এবং মেয়ে নাজলী কিবরিয়া বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক।

১৯৩৭ সালে জন্ম নেওয়া আসমা চিত্রকলা নিয়ে লেখাপড়া করেন নিউইয়র্কের উন আর্ট স্কুল ও ওয়াশিংটনের কোরকোরান স্কুলে।ওয়াশিংটনে সমসাময়িক মার্কিন শিল্পীদের সঙ্গে কাজের সূত্র ধরে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলায় প্রভাবিত হন তিনি। তার কাজ নিয়ে ব্যাংককসহ বিভিন্ন শহরে এ পর্যন্ত দশটি একক প্রদর্শনী হয়েছে।

এএসএস/জেডএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।