মিশিগানের হামট্রামিক এখন বাংলা টাউন


প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৫

শহরজুড়ে পোল্যান্ডের পোলিশ ক্যাথোলিক গির্জার গুম্বুজগুলো আকাশচুম্বি। তবে সময়ের পরিবর্তনে গির্জগুলোর পাশে আজ মসজিদ, বেড়েই চলেছে মসজিদের সংখ্যা। নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশি মন্দির। ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে বেড়েছে আজানের সুর। বেড়েছে শিক্ষার হার, পরিবর্তন হয়েছে শহরের জীবনযাত্রা। কাঁচেঘেরা দোকানে সাজানো শাড়ি-পাঞ্জাবি, বাঙালি সংস্কৃতির অবাধ পসরা। এখানে পথে হাঁটলে দেখা মিলবে বাংলা সাইনবোর্ড, ভেসে আসবে বাংলা ভাষা। বদলে যাওয়া ডেট্রয়েট–হামট্রামিক শহরটি ইতোমধ্যে পরিচিত ‘বাংলা টাউন’ নামে। এবার ঘোষণা এলো সরকারিভাবে রাজ্য সরকার থেকে।


যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট–হামট্রামিক শহরে শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে মিশিগান রাজ্যের গভর্নর রিক স্নাইডার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন। এর পাশাপাশি ফিতা কেটে বাংলা টাউনের উদ্বোধন করেন।

‘বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’র উদ্যোগে এ চেষ্টা চালানো হয়। টানা দুই বছরের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ডেট্টয়েট-হ্যামট্রামিক শহরের কনান্ট অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত বাণিজ্যিক এলাকাকে ‘বাংলা টাউন’ হিসেবে ঘোষণা করলো রাজ্য প্রশাসন। বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (ব্যাপ্যাক) নামে এক সংগঠন স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শহরটির উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন। গত ৭ বছর আগে এই এলাকারই একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় ’বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ।’ সংগঠনটির আরেকটি বড় সাফল্য নির্বাচনে ‘বাংলা ব্যালট’। বর্তমানে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বাংলা ব্যালট প্রচলিত।


বাংলাদেশি-আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রেসিডেন্ট ড. সফিউল হাসানের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এহসান তাকবিম (ববি) এক সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশ, আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা, কালচার রাজ্যের গভর্নরসহ সকল আগত অতিথিগনের সামনে তুলে ধরেন। বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলা টাউন ঘোষণার মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলো। এরপর ঐতিহাসিক এই বাংলা টাউন ঘোষণার স্মারক তুলে দেন ‘ব্যাপ্যাক’ এর সহসভাপতি শফিক বারি, সেলিম আহমেদসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গভর্নর রিক স্নাইডার তার বক্তব্য বলেন ‘বাংলা টাউন’ আইডিয়া হবে অন্য শহর ও বিভিন্ন জাতির জন্য রোল মডেল। তিনি গর্বিত এই পরিবর্তনের অংশীদার হতে পেরে। পরে গভর্নর আগত দর্শণার্থী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রশ্নের জবাব দেন। শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি সকল সংস্থায় বাংলা ভাষী (দোভাষী) কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন বলে আশ্বাস দেন। এছাড়া শহরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ছোট ও মাঝারি ব্যবসার উন্নয়নে রাজ্য সরকার সবসময় সঙ্গে থাকবে বলে জানান।


বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির কর্মকর্তা কামাল রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাবসায় কার্যকরী প্রস্তাবনা পেশ করতে অনুরোধ করেন। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহেদুল হক জানান, মিশিগান রাজ্যে মোট ৪০ হাজার বাংলাদেশি-আমেরিকানের বসবাস, এরমাঝে এই হামট্রামিক শহরেই বাস করেন বিশ হাজার।

সংগঠনের সহসভাপতি প্রকৌশলী ফয়সল সাইদ বলেন, এ শহরের তিন কাউন্সিল ম্যান বাংলাদেশি। এই ঘোষণা বাংলাদেশি আমেরিকানদের একতাবদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ। ‘বাংলা টাউন’ এর সরকারি ঘোষণা মার্কিন মুল্লুকে বাংলাদেশিদের এক অভাবনীয় সাফল্য।


‘বাংলা টাউন’ ঘোষণায় বাংলাদেশি ছাড়াও স্থানীয় আরব কমিউনিটি, পোলিশ কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেট্রয়েট–হামট্রামিক শহরের মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ।

ঘোষণার আগে বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত হামট্রামিক একাডেমির ক্ষুদের ছাত্র ও ছাত্রীদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান গভর্নর।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।