মিয়ানমারে নির্বাচন : কে বসছেন গণতন্ত্রের মসনদে
মিয়ানমারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ঐতিহাসিক এ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।তবে দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর এ মাইলফলকে কে বসতে যাচ্ছেন ক্ষমতার মসনদে তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
কয়েক দশক ধরে সেনা শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে এই প্রথম সব দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এর মাধ্যমে দেশটিতে পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে চলা সামরিক শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে। মিয়ানমারের জনগণ সেনা শাসনের কবলে থাকবে নাকি গণতন্ত্রের পথে ফিরবে এখন এ নিয়ে চলছে হিসেব-নিকেশ।
আল জাজিরা জানায়, ইয়াংগুনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকাল ৬টা থেকে লোকজনকে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগুনের এক ভোটার বলেন, আমরা পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছি।
সকাল সাড়ে ৭টায় ইয়াংগুনের একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি। এ সময় রাস্তার দুপাশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ভোটকেন্দ্রে যান। এসময় ভোটাররা জয়, জয় বলে চিৎকার করতে থাকেন। সু চি বলেন, যুগান্তকারী এই নির্বাচনে তার দলই জয় পাবে।
১৯৬২ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর সামরিক একনায়কতন্ত্রের অধীনে ১৯৯০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় এনএলডি জয়ী হলেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি। তৎকালীন সেনাশাসিত সরকার তাকে গৃহবন্দী করে। দীর্ঘদিন পর ২০১০ সালে গৃহবন্দী থেকে মুক্তি পান মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী এ নেত্রী । তবে নির্বাচনে সু চির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সংবিধান অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারির আগে পার্লামেন্ট গঠন করতে পারবেন না। কেননা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই নতুন নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে পার্লামেন্ট গঠন হবে।
মিয়ানমারের এবারের নির্বাচনে ৬৬৮ আসনের বিপরীতে ছয় হাজারেরও বেশি প্রার্থী এবং ৯১ রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১০ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। তবে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সেনা সমর্থিত ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি পার্টি ও এনএলডির মধ্যে।
মিয়ানমারের অবস্থানরত বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীরা আভাস দিয়েছেন, এনএলডির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়া সু চিও তার দলের জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন নির্বাচনে যেকোনো ধরনের ফল মেনে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে কোনো সহিংসতা না ঘটলেও বার্মা টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুয়াংডু ও আশপাশ এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। পুলিশ ও বিজিপি সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ভোটের দিন বাড়ি থেকে বের হলে হত্যার হুমকি দিয়েছে।
বেশ কয়েকজন ভোটারের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, গত কয়েক দশক ধরে দেশটিতে রোহিঙ্গারা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখায় নি।গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত সু চিও ছিলেন একেবারেই নীরব। তবে দেশটির জনগণ সেনা শাসন থেকে মুক্তি চায়। তাদের ধারণা সরকারের পরিবর্তন হলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। আর এ জন্যই তারা এনএলডিকেই বেছে নিচ্ছেন।
এদিকে রোববার এন্এলডি এক বিবৃতিতে জানায়, ক্ষমতায় থাকা ইউএসডিপি অর্থ দিয়ে ভোট কিনছে। ইউএসডিপি নির্বাচনে জয় পেলে ওই অর্থ ফেরত দিতে হবে না বলে ভোটারদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে নির্বাচনী ফলাফলে সু চি জয়লাভ করলেও স্বামী এবং সন্তান বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।ফলে সু চির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সংবিধান সংশোধনের দাবি তুলতে পারে।এক্ষেত্রে সেনা সমর্থিত ক্ষমতাসীন ইউএসডিপির প্রতিবন্ধকতা তৈরির আশঙ্কাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। চূড়ান্ত ফলাফলই বলে দেবে গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের এ অগ্রযাত্রা বন্ধুর হবে নাকি আবারো হোঁচট খাবে! আর এজন্য অপেক্ষা করতে হবে সোমবার পর্যন্ত।
এসআইএস/এএইচ/পিআর