কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে বাড়ছে সংকট
কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে ক্রমেই সংকট বাড়ছে। নৌ-পরিবহন, বিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদনসহ তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। সরকার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কথা বললেও নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ। কিন্তু হ্রদটি সৃষ্টির পর একবারও সংস্কার করা হয়নি। ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে হ্রদের পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যায়। এতে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এছাড়া নৌ চলাচল ও মৎস্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দেয় সংকট ।
অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যায় হ্রদের পানির উচ্চতা। সেই সময় রাঙামাটি জেলার নিচু এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের বাড়িঘরসহ ব্যাপক ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এতে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য হ্রদের অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া হ্রদের অতিরিক্ত পানি বাঁধের স্প্রিলওয়ে দিয়ে ছেড়ে দিলে অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় হ্রদ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ বহুবার কাপ্তাই লেকের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দিলেও সরকার এ পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানায়, কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বোচ্চ পানির লেভেল ১০৫ ফুট। এ সীমা পার করলে পানি ছেড়ে দিতে হয়। উচ্চতা ১০৯ ফুট অতিক্রম করলে বিপদসীমা। এদিকে নির্মাণের দীর্ঘ প্রায় ৫৫ বছরে একবারও ড্রেজিং না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, কাপ্তাই লেক সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে। কমিটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পটি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমছে। এছাড়া হ্রদের উভয় তীরে অব্যাহতভাবে ভাঙন হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে হ্রদে। এ সকল কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে হ্রদটি।
এদিকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়াতে এবং রাঙামাটির বিভিন্ন নদীপথে নৌ চলাচল স্বাভাবিক ও সচল করতে পাঁচটি পয়েন্টে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, যে পাঁচটি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাপ্তাই লেক ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া দরকার সেগুলো হচ্ছে- রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই, মারিশ্যা (মাইনী ও কাচালং খাল), মহালছড়ি (চেঙ্গী খাল), ছোট হরিণা ও কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এসএস