দেরিতে খুলছে পঞ্চগড়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো
পঞ্চগড়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না সংশিষ্ট এলাকার সুবিধাভোগীরা। এসব এলাকায় অবস্থিত বেশির ভাগ ক্লিনিকই নির্ধারিত সময়ের পর খোলা হয় এবং সময়ের আগের তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ডে এই কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে স্থানীয় মানুষের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি এ সকল কমিউনিটি ক্লিনিক। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ওষুধসহ কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা এবং বোদা উপজেলার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০টা পর্যন্ত অধিকাংশ ক্লিনিক খোলা হয়নি। বোদা উপজেলার মানিকপীর কমিউনিটি ক্লিনিকে অবস্থান করে দেখা গেছে তখন পর্যন্ত ওই কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা হয়নি। একটু পরেই ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোছা. হাসনা আক্তার এসে হাজির হলেন। দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি তার অসুস্থতার (অন্তসত্তা) কথা জানিয়ে বলেন, কিছুদিন থেকে মাঝে মধ্যে একটু দেরি হচ্ছে। বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয় অবগত আছেন।
একই অবস্থা পাশের ওয়ার্ডের বেংহারি মৌলবী পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের। সকাল ১০টার কিছু আগে ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি লিপি আক্তার জানালেন, তার ভাবী অসুস্থ। এজন্য একটু দেরি হলো। তবে স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে তার বিয়ে হয়েছে। এজন্য কয়েক দিন থেকে তার ক্লিনিক খুলতে একটু দেরি হচ্ছে।
বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের সুন্দরাপুকুরি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, আগে ঠিক ছিল। কয়েক দিন আগে আপার বিয়ে হয়েছে। এজন্য তিনি এখন দেরিতে আসেন। এছাড়া এই ক্লিনিকে আপা একাই স্বাস্থ্যসেবা দেন। এখানে কোনো স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) এবং পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডাব্লিউএ) বসেন না।
সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরের পরেও সেখানে তালা ঝুলছিল। এখানে একজন সিএইচসিপি, একজন এইচএ এবং একজন এফডাব্লিউএ কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু সিএইচসিপি ওয়াসিয়া খানম লুবা ছয় মাসের প্রশিক্ষণে জেলার বাইরে আছেন বলে জানা গেছে, এইচএ আনজুমান আরা তিন মাসের ছুটিতে আছেন। এছাড়া এফডাব্লিউএ সাবিনা ইয়াসমিন বুধবার অফিসে আসেন না। নিয়ম অনুযায়ী তিনি সপ্তাহে তিনদিন অফিস করেন। এজন্য এই কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে সপ্তাহে তিনদিন কিছু সময়ের জন্য খোলা হয়।
এই ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ সহকারী (এইচডাব্লিউএ) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আগামী সপ্তাহে এইচএ আনজুমান আরার ছুটি শেষ হবে। আশা করি আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা নিয়মিত হতে পারবো।
ধাক্কামারা ইউনিয়নের কাজিপাড়া এলাকার নজি মোহাম্মদের ছেলে জাহেরুল ইসলাম বলেন, কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না। শুনেছি আপা নাকি ট্রেনিং এ গেছেন। এজন্য এখন ক্লিনিক ঠিকমত খোলা হয় না।
এছাড়া বোদা এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার আগে কখনই এসব ক্লিনিক খোলা হয় না। নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করে চলেন সেবাদানকারীরা। পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় সুবিধাভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্লিনিকে রোগীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয় না।
পঞ্চগড় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ৯৯টি। এর মধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৩০টি, বোদা উপজেলায় ২৫টি, আটোয়ারী উপজেলায় ১৩টি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১০টি এবং পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেবীগঞ্জ উপজেলার কোটভাজনী ছিটমহলে সম্প্রতি আরও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম।
এ সকল ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, (সিএইচসিপি) একজন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) এবং একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডাব্লিউএ) পদে মোট তিনজন করে জনবল নিয়োগ রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।
সদর উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক আশরাফুল হক বলেন, আমি সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনের দায়িত্বে আছি। এসব ক্লিনিক সময়মত খোলা এবং বন্ধ করা হয়। তবে আমরা চাহিদা মাফিক ওষুধ দিতে পারি না। বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয় জেনে কেউ কেউ আবার কারণ ছাড়াই ওষুধ নিতে আসেন। এজন্য স্থানীয় অনেককেই আমাদের পক্ষে সন্তুষ্ট রাখা সম্ভব হয় না। কজেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে বলেন।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মনছুর আলম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থসেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পরিবহন খরচ করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা সদর হাসপাতালে না এসে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেকাংশে কমে গেছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, একজন স্বাস্থ্য সহকারী এবং একজন করে পরিবার কল্যাণ সহকারী নিযুক্ত আছেন। এসব ক্লিনিকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে।
এসএস/এমএস