৭ দফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনের হুমকি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল (বেতন কাঠামো) ঘোষণা, বিনা সুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান, চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি পূরণে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে যাবেন তারা।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের নেতারা এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মো. নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া (মিলন)। সংবাদ সম্মেলনের দাবি-দাওয়া সম্বলিত লিখিত বক্তব্য পেশ করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার।
নিজামুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৭ দফা দাবি বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৮টি বিভাগে সাংগঠনিক সফর হবে। সব বিভাগে আমরা মিটিং করব। সফর শেষে ঢাকায় প্রতিনিধি সভা হবে। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
লিখিত বক্তব্যে খায়ের আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের সব সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীরা প্রধান চালিকাশক্তি। শুধু তাই নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের সার্বিক উন্নয়নের বার্তা তৃণমূলের জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ২০০৯ সালে ৭ম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেল প্রদান করা হয়। বর্তমান সময়ে বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির দরুণ ২০২০ সালে নবম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান অনিবার্য হয়ে পড়েছে। ৯ম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান, আউট সোর্সিং প্রথার নামে দাসপ্রথা বাতিল, মন্ত্রণালয়ের মতো (পদ পরিবর্তনসহ) এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রদান ও সিনিয়র সচিব ও সচিবদের প্রতিমাসে ৩২ হাজার টাকা দেয়ার পরিবর্তে কুক ও নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদে লোক নিয়োগ করাসহ কর্মচারীদের ৭ দফা দাবি উস্থাপন করা হলো।’
১. জাতীয় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করে ১০ ধাপ বিশিষ্ট নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ১:৫ হতে হবে। আগের মত ১০০ শতাংশ পেনশন প্রথা পুনর্বহাল করতে হবে।
২. এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি চালুসহ সচিবালয়ের মত সচিবালয়ের বাইরের সরকারি কর্মচারীদের পদ ও বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। ব্লক পদধারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৩. আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে এ পদ্ধতিতে নিয়োগ করা কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। বিভিন্ন দফতর প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন খাতে কর্মরত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক বিভাগের প্রার্থী প্রথা চালুসহ মাস্টাররোল ও অন্যান্য দফতরে কর্মরত মাস্টাররোল কন্টিজেন্ট ও ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
৪. সরকারি কর্মচারীদের আগের মত তিনটি টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও বেতন সমতাকরণ পুনর্বহাল করতে হবে। জীবনযাত্রার মান স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয় বিবেচনা করে পেনশনের হার ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ও গ্র্যাচুইটির হার এক টাকায় ২৩০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
৫. নবম পে-স্কেল দেয়ার আগ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা অবিলম্বে দিতে হবে।
৬. প্রশাসন ক্যাডারে কর্মচারীদের মত ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বিনা সুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে।
৭. চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মতো অন্যান্য সকল দফতরে পোষ্য কোটা চালু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলী ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের মহাসচিব আমজাদ আলী খানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেএইচ/এমকেএইচ