ভাসানচরে ফসল-মাছচাষ-পশুপালন করতে পারবেন রোহিঙ্গারা
অডিও শুনুন
কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা চাইলে অর্থনৈতিক নানা কাজে অংশ নিতে পারবেন। সেখানে নানা ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গারা যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং তারা যাতে দক্ষ কর্মী হয়ে মিয়ানমার ফিরে যেতে পারেন সে জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
সম্প্রতি ভাসানচরে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধ্যতামূলক নয়। তারা অন্য শরণার্থীদের মতো কার্ডের মাধ্যমে রেশন ও খাবার পাবেন। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং রোহিঙ্গারা চাইলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশ্রয়ণ-৩ এর প্রকল্প পরিচালক কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রকল্পে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রেখেছি। তবে মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর রোহিঙ্গাদেরও মতামত নেয়ার বিষয় আছে।
জানা যায়, ভাসানচরে নৌবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানকারী সদস্যদের জন্য কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শরণার্থীরা চলে গেলে সেখানে দেশের অন্যান্য দুস্থ পরিবার আশ্রয় নিলে তাদের জন্যও এ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে গবাদি পশুপালন, দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন, মৎস্যচাষ এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উল্লেখযোগ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার মহিষ রয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব মহিষের খামার পরিচালনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা কর্তৃক মহিষের দুধ ব্যবহার করত দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।
এছাড়াও ছাগল ও ভেড়া পরীক্ষামূলকভাবে পালন করা হচ্ছে, যার বৃদ্ধির হার যথেষ্ট ভালো বলে প্রতীয়মান। প্রকল্পের অব্যবহৃত ১১৮ একর জমিতে এবং ক্লাস্টার হাউজের অভ্যন্তরে ফাঁকা স্থানে ভবিষ্যতে ফলদ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করা হবে। প্রকল্পের জলাধার হিসেবে একটি বড় লেক করা হয়েছে যা সুপেয় পানির মৎস্য চাষে যথেষ্ট সহায়ক হবে। প্রকল্পের আরও দুটি লেক সংশোধনী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ইতোমধ্যেই সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়াও ছোটখাট আরও জলাশয় বিদ্যমান রয়েছে যা মৎস্য চাষের জন্য যথেষ্ট অনুকূল। অব্যবহৃত ১১৮ একর জমিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোগসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা চলমান।
পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষ করেও সফলতা মিলেছে। মূলত বরিশাল এলাকায় উৎপাদন হয় এমন ধান চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া মিঠাপানিতে হয় এমন বিভিন্ন বনজ ও ফলদ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে।
সেখানকার ভেড়া লালন পালনকারী আমিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে ৩০০ ভেড়া আছে। মাত্র ৫০টি ভেড়া দিয়ে শুরু করা হয়েছিল। সেখানকার ঘাস দিয়েই তাদের লালনপালন করা হয়। বাড়তি কোনো খাবার লাগে না।
সেখানে তিন বছর ধরে অটো চালাচ্ছিলেন মো. আলমগীর হোসেন। তিনি রংপুর থেকে সেখানে কাজ করতে গেছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। কোনো যানজট নেই। রাস্তা খুবই ভালো ও প্রশস্ত।
রোহিঙ্গাদের আবাস্থল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে যে শেল্টার আছে সেখানে ক্লাস্টার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে। এরা প্রত্যেকে অবৈধপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলেন। সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। কিন্তু কোথাও ভিড়তে পারছিলেন না। পরে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দেয়। এদের মধ্যে ৯৭ জন পুরুষ, নারী ১৭৬ জন এবং শিশু ৩৩। তাদের অনেক নারী ইতোমধ্যে সেলাই কাজে অংশ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ভাসানচরের অস্থায়ী আবাসস্থল পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। মৌলিক সুবিধা নিয়ে এখানে প্রায় লাখ খানেক রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে। প্রকৃতির অকৃত্রিম দান জল ও সবুজ গাছগাছালি বেষ্টিত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওতাধীন দ্বীপটি এখন পরিকল্পিত বাসস্থানের বাস্তব উদাহরণ, যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। এখানে কাজের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে সেখানে তারা হতাশ না হয়।
প্রকল্পটিতে যাতে এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সেই ব্যবস্থার আলোকে সেখানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গৃহে, প্রতি পরিবারের চারজন করে মোট ১৬টি পরিবার বসবাস করতে পারবে। এছাড়া প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেয়ার জন্য তৈরি শেল্টার স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ে ২৩টি পরিবার বসবাস করতে পারবে।
এ হিসাবে ক্লাস্টারের ১২টি হাউজে মোট ৭৬৮ জন এবং একটি শেল্টার স্টেশনে মোট ৯২ জনসহ মোট ৮৬০ জন সদস্য বসবাস করতে পারবেন। প্রতিটি হাউজের একপ্রান্তে বসবাসকারী পরিবারের নারী-পুরুষের জন্য আলাদা গোসলখানা, শৌচাগার ও রান্নাঘরও রয়েছে।
এইচএস/বিএ/জেআইএম