মাদারীপুর খাদ্যগুদামে টাকা লোপাটের অভিযোগ
মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয়ের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের পর প্রশাসন ও স্থানীয়দের চাপের মুখে নিম্নমানের চাল গুদামজাত করার সময় বুধবার সন্ধ্যায় চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামের প্রবেশপথে ২০ মেট্রিক টন চাল বোঝাই ট্রাক (যশোর-ট-১১-০০৭১) আটক করেছে সদর থানার পুলিশ।
এসময় ট্রাকের চালক নান্নু শেখকে (৬০) আটক করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ আলম প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোর মৌসুমে বাংলাদেশ খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক মাদারীপুরের চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় করে গুদামজাত করার জন্য ৫ অক্টোবর মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে বলা হয় ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবরের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ২২ হাজার টাকা মেট্রিকটন দরে ৪শ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের উল্লেখ করা হয়। যার বর্তমান বাজার দর ১৬ হাজার টাকা প্রতি মেট্রিকটন।
বিধান রয়েছে, যে সকল কৃষক কৃষি অধিদফতর থেকে অনুমোদিত সনদপত্রপ্রাপ্ত শুধু তারাই প্রতিজন ১শ কেজি থেকে ৩ হাজার কেজি পর্যন্ত ধান সরবরাহ করতে পারবেন। এতে ৪শ মেট্রিকটন ধান সরবরাহ করতে ১৩৪ জন কৃষকের প্রয়োজন হয়।
চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে যে জনবল রয়েছে তাতে প্রতিদিন ৫০ মেট্রিকটন ধান আনলোড করার ক্ষমতা নেই। কিভাবে দুই দিনের মধ্যে ৪শ মেট্রিকটন ধান গুদামজাত করা হলো এনিয়েই জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ আলম ৬ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর ২ দিনের মধ্যে চরমুগরিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে ধান না ক্রয় করে ধান ক্রয়ের অনুকূলে প্রায় ১৩৪ জন ভুয়া কৃষকের নামে সার্টিফিকেট তৈরি করে ৮৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
যাদের নামে সার্টিফিকেট তৈরি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেসব কৃষকের একজনও জানেন না এবং তাদের কোন স্বাক্ষর নেই। সরকারি বিধান রয়েছে ক্রয়কৃত ধান গুদামজাত করে মিলারদের মাধ্যমে চাতালে দিয়ে ধান মিলিং করে চাল গুদামে খামালজাত করতে হবে।
চাতাল মালিকদের কাছে ধান মিলিংয়ের জন্য দেয়ার সময় প্রতি টনের বিপরিতে ২৪ হাজার টাকার পে-অর্ডার দিতে হয় এবং ৩শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু কোনো নির্ধারিত মিলারদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো পে-অর্ডার বা চুক্তিপত্র করা হয়নি। যা করা হয়েছে তার সবই তাদের মনগড়া। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভুয়া মিল দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এই বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করার ফন্দি আটেন।
এ অবস্থায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে গত ২ নভেম্বর মাদারীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান, মিলার, ডিলার, সিপিসি ও ব্যবসায়ীগণ জেলা প্রশাসকের কাছে সরকারি মালামাল আত্মসাৎতের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।
তাদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে ৫০ লাখ টাকার ধান-চাল-গম ঘাটতি রয়েছে। জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে ৩ নভেম্বর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ৩ নভেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিউর রহমান সরেজমিন তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করে বিষয়টি গোপন রাখেন। ঘটনাটি জানতে পেরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভিন্ন স্থান থেকে কমদামে নিম্নমানের চাল নিজেরা ক্রয় করে গুদামের ঘাটতি পূরণের জন্য উদ্যোগ নেয়।
এর অংশ হিসেবে টেকেরহাট থেকে চাল বোঝাই করে একটি ট্রাক (যশোর-ট-১১-০০৭১) ২০ টন চালসহ চরমুগরিয়া খাদ্য গুদামের প্রবেশপথ থেকে আটক করে সদর থানা পুলিশ।
পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমারটেক এলাকার মিলার একিন দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার রাত ২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ আলম ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহজাহান খান আমার বাড়িতে গিয়ে জোর পূর্বক ডিও লেটার ও স্টাম্পে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে তারা আমার লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে আসেন। এসব কথা আমি তদন্তের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বলেছি।
এ ব্যাপারে চরমুগরিয়া খাদ্যগুদামে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা করা হয়েছে তা বিধান মতোই করা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহজাহান খান-এর সঙ্গে তার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তানভীর আহমেদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনিও কোনো সাড়া দেননি।
মাদারীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ চাল আটকের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু আর বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/পিআর