পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ায় পুতুলকে খুন করেন স্বামী


প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৫

পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ার ক্ষোভে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে মাথায় পাথর ছুঁড়ে স্ত্রী পুতুল বেগমকে খুন করে মরদেহ ভ্যালি স্কুলের পাশের জঙ্গলের নালায় ফেলে আসি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৫ম আদালত) কুদরাত-ই-খোদার খাসকামরায় ঘাতক স্বামী উমর ফারুক দুলন নির্মম এই হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বহুল আলোচিত পুতুল হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে টানা তিন ঘণ্টা জবানবন্দিতে ঘাতক দুলন পুরো ঘটনার বর্ণনা দনি। তিনি জৈন্তাপুর থানার পুকুরপাড় গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে।

জবানবন্দি শেষে সন্ধ্যা ৭টায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জৈন্তাপুর এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক উমর ফারুক দুলনকে গ্রেফতার করে। এক পর্যায়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী পুতুলকে নিজেই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে দুলন।

দুলনের জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জৈন্তাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিনয় ভুষন রায় জাগো নিউজকে জানান, গত ১৯ অক্টোবর স্ত্রী পুতুল বেগমকে (২৪) দুলন মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যান জৈন্তাপুর আলুরতল ব্লক ফ্যাক্টরিতে। ওই ফ্যাক্টরিতে তিনি চাকরি করেন। সেখানে স্ত্রী আসার পর তারা দু’জন মিলে সাংসারিক কথাবার্তা বলেন।

এরপর পুতুলকে নিয়ে জৈন্তাপুরের আলুরতল জঙ্গলের ভেতর যান। সেখানে দু’জনের কথাবার্তার একপর্যায়ে পুতুলের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্ক রয়েছে কি-না জানতে চান দুলন। পুতুল না বলার পর দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে দুলন উত্তেজিত হয়ে পুতুলকে পাথর দিয়ে মাথায় তিন-চারটি আঘাত করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এরপর তার মরদেহ ফেলে দেয়া হয় জঙ্গলের পাশে একটি খালে। দুলন এভাবে আদালতে প্রায় তিন ঘণ্টা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দনি।

পুতুলের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে জৈন্তাপুর উপজেলার উমর ফারুক দুলন (৩৩) এর সঙ্গে বিয়ে হয় পুতুল বেগমের। পুতুল বি-বাড়িয়া জেলার নাছিরনগর থানার পান্দাউক গ্রামের মো. রফিক মিয়ার কন্যা। গত দু’বছর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়।

এ কলহের কারণে পুতুল পিতার বর্তমান ঠিকানা সিলেট নগরের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বসবাস করতেন। পুতুল মেজরটিলা স্কলার্স হোম স্কুলের আয়া হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৯ অক্টোবর রাত ৮টায় পুতুল বাসা থেকে বের হন। এরপর আর তিনি বাসায় ফিরেননি। পুতুলকে না পেয়ে তার পিতা রফিক মিয়া কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করেন। জিডিতে তিনি গত ১৯ অক্টোবর থেকে মেয়ে নিখোঁজ এর কথা উল্লেখ করেন।


গত ৩১ অক্টোবর জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক ফলবাগান বর্তমান জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলের সংরক্ষিত এলাকার একটি নালার পার্শ্বে জঙ্গল হতে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ (কংঙ্কাল) উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর একটি হাতে সোনার চুড়ি ছিলো। কঙ্কালের আলামত রেখে অজ্ঞাত এই নারীর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবেই সিলেট নগরের মানিকপীর টিলায় দাফন করা হয়েছিল। মরদেহের সঙ্গে পাওয়া চুড়িটি রাখা হয়েছিল জৈন্তাপুর থানায়।

গত বুধবার রাতে থানায় রাখা এই চুড়ি দেখে বাবা রফিক মিয়া শনাক্ত করেন কঙ্কালটি তার মেয়ে পুতুল বেগমের। পুতুলের ভাই বায়েজিদ জানান, মেয়েকে শখ করে চুড়ি কিনে দিয়েছিলেন মা আনোয়ারা বেগম। একই ধরনের চুড়ি ছিল পুতুলের মায়ের হাতেও। তাতেই উদঘাটিত হয় উদ্ধার হওয়া লাশটি পুতুলের।

অজ্ঞাত নারীর পরিচয় জানার পর গত বুধবার মধ্যরাতে পুলিশ গ্রেফতার করে পুতুলের স্বামী উমর ফারুক দুলনকে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুলন স্ত্রী পুতুলকে নিজেই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে।

এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি কঙ্কাল পাওয়ার সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে কঙ্কালের সঙ্গে একটি চুড়ি পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসব জানার পর গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় করা সাধারণ ডায়েরির কপিসহ জৈন্তাপুর থানায় যান পুতুলের পিতা রফিক মিয়া।

এ সময় তার সঙ্গে ছিল ছেলে বায়েজিদ। সেখানে প্রথমে তারা পুলিশের কাছে রাখা চুড়ি দেখতে পান। ওই চুড়ি দেখার পরই তারা নিশ্চিত হন এটি পুতুলের।

একপর্যায়ে পুতুলের মায়ের হাতে থাকা চুড়ির সঙ্গে মিলে যায়। এ ঘটনায় পুতুলের পিতা মো. রফিক মিয়া বাদি বুধবার রাতেই জৈন্তাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ছামির মাহমুদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।