দৈন্যদশা কাটছে না মাগুরার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে
মাগুরায় ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এছাড়াও জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব কারণে ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় চরম অসুবিধায়।
জেলার বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজা জানালা আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বর্তমান সরকার ক্লিনিকগুলো সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্লিনিকে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ ও একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থে ক্লিনিকগুলো যুগ-উপযোগী করে সংস্কার না হওয়ায় সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে উপজেলার ১৯টির মধ্যে ১৮টি ক্লিনিকে প্রোভাইডার নিয়োগ দিলেও সব্দালপুর ইউনিয়েনের সোনাইকুন্ডি কমিউনিটি ক্লিনিকে অদ্যাবধি কোনো হেলথ প্রোভাইডার নিয়োগ দেয়া হয়নি।
ওই এলাকার স্বাস্থ্য সহকারী হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রোভাইডার নিয়োগ না দেয়ায় ওই এলাকায় তাকেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে সকাল ও বিকেল দায়িত্ব পালন করতেও খুব অসুবিধা হয়। রোগীরাও ক্লিনিকে আসতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। অন্যদিকে বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত অনেক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র (ফ্যান, লাইট) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারের চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে না পারায় এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ ক্লিনিকগুলোর জানালা দরজা ভাঙা, টিউবওয়েল থাকলেও পানি পাওয়া যায় না। ক্লিনিকগুলোতে যেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে খাবার স্যালাইনসহ বিভিন্ন ধরনের ২৮ প্রকারের ওষুধ। যে কারণে তারা আর আগের মত এসব ক্লিনিকে না এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ইচ্ছা না থাকা শর্তেও ভিড় জমাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, বর্তমান সরকারের সাফল্যের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন আশা ব্যক্ত করেন এলাকাবাসী।
মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মো. কওছার আলী জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশের প্রতিটি উপজেলার ন্যায় মাগুরার চার উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে (ইউনিয়নে) স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এসব ক্লিনিকে দরিদ্র মানুষের সেবা দান করার জন্য একজন করে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএমসিপি) নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জোট সরকারের আমলে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্লিনিকগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্লিনিকগুলো আবারও চালু করলেও দৈন্য দশা আজো কাটেনি।
এসব বিষয়ে মাগুরা সিভিল সার্জন ডা: এফবিএম আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে জানান-দীর্ঘ দিন এসব ক্লিনিক বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে খুব দ্রæতই এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। ইতিমধ্যে সশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলেও এই কর্মকর্তা জানান।
আরাফাত হোসেন/এআরএ