সত্যি হচ্ছে ৩৮ বছরের স্বপ্ন
দেশকে পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত করে একটি স্বাধীন সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার পর থেকেই মাত্র একটি স্বপ্ন দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে লালন করে আসছিলাম। অসহায় দরিদ্র লোকদের চোখের চিকিৎসার জন্য একটি আধুনিক হাসাপাতাল নির্মাণের। অবশেষে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। আর কিছুদিন পর সোনাইমুড়ীসহ আশপাশের হাজার হাজার মানুষ দূর দূরান্তে না গিয়ে স্বল্প খরচে আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা নিজ এলাকায় চোখের সু-চিকিৎসা করাতে পারবেন। কথাগুলো বলছিলেন সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া।
তিনি জানান, `সেবাই মানুষকে মহৎ করে` এ স্লোগানকে সামনে রেখে মূলত ১৯৭৮ সালে কয়েকজন মহতী মানুষের উদ্যোগে ও অনুপ্রেরণায় সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হিসেবে সমাজের কিছু বিত্তবান ও মহান মানুষের দান অনুদান নিয়ে এ সংগঠনের দীর্ঘ পথ চলা। দীর্ঘ সময় ধরে সবাই স্বপ্ন লালন করে আসছিল বৃহত্তর নোয়াখালী ( ফেনী,লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী) পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার জেলার কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৪০ লাখ লোকের বিনা মূল্যে চোখের চিকিৎসার জন্য এখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার।
কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান না হওয়ায় লালিত স্বপ্নের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে এ সমিতির সভাপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব (বর্তমানে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন) সাহাব উল্লাহর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত `ইস্টাব্লিশমেন্ট অব সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতি আই হসপিটাল` শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রী কৃর্তক অনুমোদিত হওয়ায় এর নবযাত্রা শুরু হয়।
২০১১-২০১২ অর্থবছরে সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতির যৌথ অর্থায়নে (যথাক্রমে ৮০% ও ২০%) ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার পাপুয়া গ্রামে ১৪৫ ডিং ভূমির ওপর ৩০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসাপাতাল নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ার পর যথাযথ নিয়মে ঠিকাদার নিয়োগ করে বর্তমানে হাসপাতালের অবকাঠামোগত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ইতোমধ্যে হাসপাতালের জন্য অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় আধুনিক মানের যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র আনা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগে বিলম্ব হওয়ার পাশাপাশি ও হাসপাতালের প্রধান সড়কটির মেরামতে একটু ধীর গতি রয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পের চুক্তি অনুসারে সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ শতাংশ হারে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকী ৭০ লাখ টাকার পরিশোধ সাপেক্ষে ৩১ ডিসেম্বর সরকার থেকে বুঝে নিয়ে হাসাপাতালের সেবার কাজ চালু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেটি এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যাটি সমাধানে আগের মতো সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে বিপুল এ অর্থের সংস্থানের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে অন্ধ কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একটি খোলা চিঠিও দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রায় ৩৮ বছর পর সোনাইমুড়ীতে চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের খবরে সমিতির সদস্যরা ছাড়াও এলাকার জনগণের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। কবে হাসপাতাল উদ্বোধন হবে সে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন সবাই। শ্রম ঘাম, মেধা ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যারা এ সমিতিকে উৎসাহ দিয়েছেন তারাও প্রতিদিন খোঁজ খবর নিচ্ছেন কবে হচ্ছে উদ্বোধন।
সরেজমিনে পৌর এলাকার পাপুয়া গ্রামে অবস্থিত সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতি আই হসপিটালে গিয়ে দেখা যায়, দিন রাত সমানতালে চলছে হাসাপাতালের কাজ। উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের।
কথা হয় সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার আবদুল খালেকের সঙ্গে। তিনি জানান, হাসাপাতালের মূল ভবনের কাজ অনেকটাই শেষ। বাকী যেগুলো আছে তাও দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবদুল গফুর জানান, তার চোখের সমস্যা হওয়ার পর তিনি চট্রগ্রামে গিয়েছিলেন। এখন আর তার মতো চোখের সমস্যা যাদের আছে তাদের কষ্ট করে ঢাকা-চট্রগ্রামে আর যেতে হবে না। বাড়ির কাছে স্বল্প খরচে উন্নতমানের চোখের চিকিৎসা পাবে। পাশাপাশি এলাকার শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক নোয়াখালী সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর ও ফেনী ) জেলায় সরকারের এত বড় প্রকল্প আর নেই। হাসাপাতালটি পুরো দমে চালু করা হলে সোনাইমুড়ী উপজেলা নয় আশপাশের জেলাগুলোর মানুষও এ হাসাপাতাল থেকে চোখের চিকিৎসা করাতে পারবে।
তিনি আরো জানান, বিদ্যামান সমস্যাগুলো সমাধানে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসলে কোনো সমস্যা থাকবে না। নির্দিষ্ট সময়ে এটি উদ্বোধন হবে।
উল্লেখ্য, সোনাইমুড়ী অন্ধ কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে এ পর্যন্ত ২৯ টি ভ্রাম্যামাণ আই ক্যাম্প করা হয়েছে। আউটডোরের মাধ্যমে প্রায় ৫৪ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা দেয়া ছাড়াও ৯ হাজার ৭`শ জন রোগীর চোখে বিনামূল্যে লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং ৩ হাজার ৪`শ জনকে সান গ্লাস দেয়া হয়েছে।
এসএস/পিআর