উত্তরাঞ্চলে আবারও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

উজানের ঢল ও উত্তরাঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীর পানি আবারও বাড়ছে। এতে এ অঞ্চলে আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এদিকে আগের বন্যায় ডুবে যাওয়া চরগুলো থেকে পানি নেমে যাওয়ায় সেখানে পুরোদমে চাষাবাদ শুরু করেছিল কৃষক। কিন্তু পানি বাড়ার কারণে আবারও ডুবেছে চরের জমি।

আগস্ট মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেক কৃষক তাদের জেগে ওঠা জমিতে, ধান, মাসকলাই, শাক-সবজি আবাদ করেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে যমুনা, ইছামতি, বাঙালি, ধরলা ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বেড়ে ফসল ডুবে গেছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এভাবে আর ৪/৫ দিন বাড়লে আবার আগস্টের মতোই বন্যা হবে।

বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এর আগে বন্যার পেটে ধান গেছে, পাট গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বারবার চেষ্টা করছি চাষাবাদ শুরু করার কিন্তু পারছি না। চরের জমি বারবার বন্যায় ডুবছে, উঁচু জমিতে চাষ করতে পারছি না টানা বৃষ্টির কারণে।’

flood-3.jpg

তিনি বলেন, ‘বগুড়ার মরিচের (বগুড়ার ঝাল) সারাদেশেই ব্যাপক চাহিদা। পূর্ব বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, সোনাতলা ও কাজীপুর উপজেলার কিছু অংশে এই মরিচ চাষ হয়। ভাদ্র মাসের মধ্যেই এই মরিচ বপন করার কথা। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে জমিতে জো আসছে না (শুকাচ্ছে না)। সবসময় মাটি ভেজা থাকছে। ফলে উঁচু জমিতেও আমরা মরিচ চাষ করতে পারছি না। চরের জমিতে বানের পানি একবার নামে আবার ডোবে। ফলে সেখানেও চাষ করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এবার মরিচ আবাদ করতে পারব কি না- সেটাও বলতে পারছি না।’

একই উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্টের বন্যায় ২ বিঘা জমির ধান তলিয়ে যাওয়ায় আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এক সপ্তাহ হলো হাওলাত করে টাকা এনে ওই জমিতে আবার ধান রোপণ করেছিলাম। এছাড়া অন্য এক বিঘা জমিতে বেগুন গাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনে যমুনার পানি বেড়ে জমিতে সদ্য লাগানো ধান ডুবে যেতে বসেছে। আর কিছু পানি বাড়লেই ধান পাওয়ার কোনো আশা থাকবে না। পানি প্রতিদিন বাড়ছে। এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

flood-3.jpg

ধুনট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, ‘দফায় দফায় বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা ব্যবস্থা করেছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মাসকলাই, শাক-সবজি বীজ ও আমন চারা প্রদান করা হয়। প্রণোদনা পেয়ে কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু অসময়ে নদীর পানি বাড়ায় কৃষকেরা মহাচিন্তায় পড়েছেন।’

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ‘উজানের ঢলে যমুনার পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই এক বছর পরপর এ সময়ে যমুনার পানি বেড়ে বন্যা হয়। তবে যে হারে যমুনার পানি বাড়ছে, তাতে এবার আশ্বিনেও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।’

স্থানীয় সাংবাদিক রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাইবান্ধা, পলাশবাড়ি, সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষক দুটো পয়সার আশায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে উঁচু জমির সবজিও নষ্ট হয়ে গেল। অনেকে বন্যার পর সরকারের সহযোগিতা নিয়ে মাসকলাই, শশা, টমেটো, লাউ, মুলা, লালশাক, পালং শাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু চর এলাকায় আবার বন্যার পানি বেড়ে এসব সবজি ক্ষেত ডুবে যাচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে দু-তিন দিনের মধ্যে আবারও আগস্টের মতো বন্যা হয়ে যাবে।’

সিরাজগঞ্জের চরমালসাপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, ‘আগের বন্যায় ধান, পাট ডুবে গেছে। এখন শীতকালীন সবজি করেছি প্রায় দুই বিঘা জমিতে। গত কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি আবার বাড়ছে। আর এক হাত পানি বৃদ্ধি পেলে আমার সবজি ক্ষেতে ঢুকে যাবে পানি। এ নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি। এবার সবজি ক্ষেত ডুবলে নিঃস্ব হয়ে যাব। পরবর্তী ফসল করার মতো কোনো অবস্থা থাকবে না।’

এফএইচএস/এফআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।