পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ে অনিয়ম


প্রকাশিত: ০৪:০১ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৫

শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সঙ্কট এড়াতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে এবার আগেভাগেই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, দায়সারাভাবে শুরু হওয়া এ ড্রেজিংয়ে তেমন সুফল মিলছে না।

অভিযোগ রয়েছে দিনের বেশিরভাগ সময়ই ড্রেজার বন্ধ থাকছে। অথচ কাগজে কলমে কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে ড্রেজারের তেল খরচ দেখানো হচ্ছে বেশি। এছাড়া ড্রেজিং করে নদীর মাটি ফেলা হচ্ছে নদীতেই। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বর্ষার পরপরই পদ্মায় দ্রুত গতিতে পানি কমছে। সামনের দিনগুলোতে পানি কমার হার আরো বাড়বে। আর এতে পাটুরিয়া ঘাটের বেসিন ও নৌ-চ্যানেলে নাব্য সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আগাম প্রস্ততি হিসেবে ওই দুটি স্থানে গত ৪ অক্টোবর থেকে চারটি ড্রেজার দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু হয়। চার ড্রেজারের মধ্যে ডি-১৩৯ ও ডি-১৩৮ নামের দুটি ড্রেজার বিআইিব্লিউটিএ এর নিজস্ব। বঙ্গ ও খনক-২ নামের অন্য দুটি ড্রেজার ভাড়া করা।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে পাটুরিয়া বেসিনে চার শত ফিট প্রশস্ত ও ৩ হাজার ফিট দৈর্ঘ্য এবং নৌ-চ্যানেলে তিন শত ফিট প্রশস্ত ও ১ হাজার ৫শ ফিট দৈর্ঘ্য খনন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পলি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আট লাখ ঘন মিটার। তবে এর পরিমাণ কম বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ড্রেজিং সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেরির কয়েকজন কর্মচারী জাগো নিউজকে জানান, কাগজে কলমে এর হিসাব ঠিক থাকলেও,পানির নিচে মূলত কতটুকু পলি অপসারণ করা হচ্ছে তা একমাত্র ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট ছাড়া কেউ বলতে পারেন না। তাই ড্রেজিংয়ে নামে প্রতিবছরই সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও তেমন সুফল আসে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রানা ও শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, দিনের বেশির ভাগ সময়ই ড্রেজার বন্ধ থাকে। অনেক সময় ড্রেজার চললেও, মাটির বদলে শুধু সাদা পানি পড়তে দেখা যায়। তারা জানান, নদীর তীরে অনেক খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে মাটি না ফেলে ড্রেজিং করে নদীর মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এর ফলে পুনরায় খননকৃত জায়গা ভরাট হওয়ার আশঙ্ক দেখা রয়েছে।

paturea

সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাটে এ রিপোর্ট তৈরির সময়ও দেখা যায় চারটি ড্রেজারের মধ্যে দুটিই বন্ধ। চালু থাকা দুটি ড্রেজারের খননকৃত মাটি পুনরায় নদীতেই ফেলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ এর ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ মো. তৌফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা ও হাইড্রোগ্রাফি সার্ভের মাধ্যমে নদী খনন করা হচ্ছে। তীরে মাটি ফেলার মতো পরিবেশ না থাকায় নদীর মাটি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ এর প্রতিটি ড্রেজার প্রস্তুতিসহ ১৬ ঘণ্টা চলার কথা। অন্যদিকে, ভাড়া করা ড্রেজারগুলোর ঘণ্টার হিসাব না থাকলেও, প্রতি ঘনফুট পলি অপসারণ করছে ১৫০ টাকা  দরে। বেসরকারি একটি ড্রেজার ণ্টিায় ২৪০ থেকে ২৫০ ঘন মিটার পলি অপসারণ করতে পারে। প্রতি ঘণ্টায় একটি ড্রেজারে তেল খরচ হয় ১৩০ লিটার।

অভিযোগ রয়েছে, ড্রেজার বন্ধ থাকলেও, কাগজে কলমে কর্মঘণ্টা ঠিক রাখা হয়। এর ফলে বেঁচে যাওয়া তেল বিক্রি করা হয় অন্যত্র। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো। বিআইডব্লিউটিএ এর মাঠ পর্যায় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত এই তেল চুরির ভাগ পান বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর ড্রেজিং বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, ড্রেজার স্থাপনের সময় প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে মাঝে মধ্যে ড্রেজিং বন্ধ থাকতে পারে। তবে ড্রেজার বন্ধ রেখে তেল বাঁচানোর কথাটি সঠিক নয়। এর কোনো সুযোগও নেই। ড্রেজিং বিভাগের কারো মধ্যে এ ধরনের কোনো মনমানসিকতাও নেই বলে জানান তিনি।

বি.এম খোরশেদ/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।