খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশ যাবেন কর্মকর্তারা
অডিও শুনুন
খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশ যাচ্ছেন বেশ কিছু কর্মকর্তা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় এসব কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় কীভাবে খিচুড়ি রান্না করা হয়, এর পরিবেশ ও পরিবেশন দেখতে এই প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু কর্মকর্তা বিদেশ সফর করবেন। কবে কতজন বিদেশ সফর করবেন সে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় খাবার হিসেবে রান্না করা খিচুড়ি পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে পরীক্ষামূলক হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক বিদ্যালয়ে দুপুরের টিফিন হিসেবে খুদে শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জানুয়ারিতে নতুন প্রজেক্ট শুরু হবে। সেটাতে যেসব কর্মকর্তা নতুন যুক্ত হবে তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে ভারত, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড ভ্রমণ করানো হবে।
প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, এক হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না শিখতে বা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। পরিকল্পনা কমিশন থেকে এর অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে অধিদফতর। স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের জন্য তাদেরকে বিদেশ পাঠানো হবে। জনগণের টাকা খরচ করে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে এক হাজার সংখ্যাটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘বড়জোর ৮-১০ জন হতে পারে। তবে এটি এখনও পাস হয়নি।’
তার মতে, এর জন্য দুটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশে ১০ হাজার জনের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০ কোটি টাকা। আর বিদেশের জন্য বরাদ্দ ৫ কোটি।
ডিপিই ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সফরে গিয়ে কর্মকর্তারা এ ধরনের প্রকল্পের জন্য বাজার থেকে কীভাবে দ্রব্যাদি ক্রয় করা হয়, খিচুড়ি রান্নার নিয়ম এবং তা বিতরণের উপায় সম্পর্কে ধারণা নেবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই, পরিকল্পনা কমিশন এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তারা পাঁচ বছরের মধ্যে এই সফরের সুযোগ পাবেন।
ওই প্রকল্পের পরিচালক এবং ডিপিই কর্মকর্তা রুহুল আমিন খান বলেন, ‘বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে কীভাবে খিচুড়ি রান্না করতে হয় এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয় সে বিষয়ে তারা ধারণা নিতে পারবেন। এই কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।’ এ জন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ডিপিইর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বিদেশ যাত্রার জন্য পাঁচ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশেই প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে আরও ১০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এর আওতায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় এক কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর বিস্কুট ও রান্না করা খিচুড়ি দেয়া হবে। ৫০৯টি উপজেলার শিক্ষার্থীরা এ খাবার পাবে।
তবে পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্প থেকে বিদেশ যাত্রা বাতিল করার কথা বলেছে। এছাড়া দেশেও এ ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয়ে যৌক্তিকতা কী জানতে চেয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের খাবার বিতরণ নতুন নয়। ডিপিই দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তবে এ বিষয়ে রুহুল আমিন খান জানান, গত বছর ভারতের কয়েকটি স্কুল তারা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কীভাবে খাবার রান্না হয় সে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আরও কর্মকর্তাকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন। অবশ্য আগামীতে কোন দেশ তারা ভ্রমণ করবেন সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্প পাস হলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন এ প্রকল্পের আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করেছে।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে সামাজিক সংহতির জন্য সাড়ে সাত কোটি ও পরামর্শকের জন্য ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি এসি ও দুই কোটি টাকা দিয়ে ফার্নিচার ক্রয়ের বিষয়েও আপত্তি তুলেছে কমিশন। মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।
ওই প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা খাবার ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া খাবার সরবরাহের জন্য ১৭ কোটি এবং প্লেট কেনার জন্য ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই ব্যয় মূল্যায়ন ছাড়াই কমানো সম্ভব বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের আওতায় এসইউভি ও ৬টি মাইক্রোবাস কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করেত চায় ডিপিই। এছাড়া গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেড় কোটি, জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্টের জন্য ৬০ লাখ এবং যাতায়াতের জন্য ২০ লাখ টাকা চেয়েছে তারা। পরিবহন সংক্রান্ত এই ব্যয়েরও যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর পাশাপাশি পরিদর্শন ও মূল্যায়নের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সব ধরনের বিদেশ সফর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সবকিছু খতিয়ে দেখে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হবে।’
এমএইচএম/এফআর