ইচ্ছেমতো চলছে নেত্রকোনার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো
জোরেসোরে শুরু হলেও বর্তমানে সেবার মান কমে এসেছে নেত্রকোনার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর। দু’বছর আগেও একবারেই বন্ধ থাকতো এ সকল ক্লিনিক। তবে তদারকি বাড়ার কারণে নিয়মিত খুললেও কার্যক্রমের গতি অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হেলথ প্রোপ্রাইডার জানান, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তাদের সরকারি চাকরির বয়সও। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালালেও সরকার তাতে কর্ণপাত করছেন না। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা থাকায় কর্মস্থলে তারা মনোযোগ দিতে পারছেন না। তাই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছেন অনেকটা দায়সারা গোছের।
নেত্রকোনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলায় মোট ২৫৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও বর্তমানে কাগজে কলমে চালু রয়েছে ২১৯টি। নেত্রকোনা সদরে ৪৬টি, পূর্বধলায় ৩০টি, দুর্গাপুরে ২৫টি, কলমাকান্দায় ৩১টি, বারহাট্টায় ১২টি, মোহনগঞ্জে ১২টি, খালিয়াজুরিতে ৩টি, মদনে ৯টি, আটপাড়ায় ১৬টি ও কেন্দুয়ায় ৩০টি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু আছে।
সরেজমিনে নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক খোলা থাকায় রোগীর চাপ অনেক। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে।
এই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা ওই এলাকার আমলী গ্রামের জালাল উদ্দিন (৬৫) জাগো নিউজকে জানান, কাছে এই হসপিটাল (কমিউনিটি ক্লিনিক) থাকায় এখনো বেঁচে আছি বাবা। আমার তো দূরাত (দূরে) যাওয়ার খেমতা (ক্ষমতা) নাই, হেইডা লাগি এইনি আই। ডাক্তর বুবু ওষুধ দেয়।নিয়া খাই।
একই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কাঞ্চনপুর গ্রামের ৪ মাসের শিশু রিয়া মনির মা হোসনা আক্তার জাগো নিউজকে জানান, এই বাচ্চা নিয়া আমি কই যাইতাম, এখানে ওষুধ পত্তর দেয়। হেইডার লাইগাই আমার বাচ্ছাডারে নিয়া আইছি।
একই কথা জানালেন সেবা নিতে আসা লাকমিয়া, বিলকিছ আক্তার। তাদের দাবি আরো বেশি ওষুধ সরবরাহ করার।
কাঞ্চনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সাবেরাজ পারভীন জেনি জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন এই ক্লিনিকে প্রায় ৪০/৬০ জন রোগী সেবা নিতে আসে। আমরা সরকার থেকে সরবরাহকৃত ওষুধ দিচ্ছি। এজন্য প্রতিদিনই রোগী আসছে।
আর কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাদের চুক্তি মোতাবেক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ৩১ জানুয়ারি ২০১৬। এজন্য মেয়াদ শেষে কি হবে তা নিয়ে শঙ্কিত আছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম নাদিম জাগো নিউজকে জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষে তাদের অনেকেরই সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে। ফলে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে নেয়ার দাবি জানান।
তবে কোনো কোনো ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী ও কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত না থাকার অভিযোগও রয়েছে। আর সপ্তাহে দু’দিন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক গিয়ে সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তাদের কখনোই যেতে দেখেন না স্থানীয়রা। ফলে সরকারের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না দরিদ্র জনগোষ্টী।
নেত্রকোনা সিভিল সার্জন ডা. বিজন কান্তি সরকার জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ করছে সরকার। ৩৬ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে প্রতিনিয়িত। জেলার ২৫৮টি ক্লিনিকের মধ্যে ৩৯টির অবকাঠামো তৈরি না হওয়ায় চাল করা যাচ্ছে না । শগিগিরই এগুলো চালু করা হবে। আর কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসএস/পিআর