সেই মেয়েটি এখন যশোর হাসপাতালে


প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০১৫
প্রতীকী ছবি

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, এরপর অপহরণ ও গর্ভের সন্তান হত্যার শিকার সেই স্কুলছাত্রীকে যশোর ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দু’দফায় মামলা করে এখন মেয়েটির পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

গর্ভবতী অবস্থায় অপহরণের দশদিন পর শনিবার ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে মেয়েটি উদ্ধার হয়। তবে এর আগেই অপহরণকারীরা তার সিজারিয়ান অপারেশন করে গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছে। মেয়েটির বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাকুড়া এলাকায়।

যশোর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মেয়েটি তার অপহরণ ও সন্তান হত্যার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

মেয়েটি জানান, ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া এলাকা থেকে মুখ ঢাকা অবস্থায় এক নারী তাকে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে মুখে গ্যাস জাতীয় কিছু একটা দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেরিঘাট এলাকায় তার জ্ঞান ফেরে। সেখানে দেখতে পান একটি মাইক্রোবাসের মধ্যে তারা। মাইক্রোবাসে চালক ছাড়াও মুখ ঢাকা এক নারী ও পুরুষ ছিল।

তারা ঢাকায় নিয়ে পরের দিন (২৪ অক্টোবর) একটি বাড়িতে রেখেই মেয়েটির সিজারিয়ান অপারেশন করায়। সন্তানটি ৪দিন পর মারা যায়। সিজার অপারেশনের পর ওরা ৬০ হাজার টাকার কথা আলোচনা করছিল বলেও জানায় মেয়েটি। বাচ্চা মারা যাওয়ার পর ওই চক্র তাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিল বলে দাবি মেয়েটির।

মেয়েটি আরও জানায়, গত শনিবার তার পেটের সেলাই কেটে ওইদিন গভীর রাতেই তাকে ঢাকার গাবতলী এলাকায় ফেলে রেখে যায়। রোববার সকালে গাবতলী থেকে স্থানীয়রা তার কান্নাকাটি দেখে তাকে বেনাপোলের গাড়িতে তুলে দেয়। বিকেলে সে বেনাপোলে মামার বাড়িতে পৌঁছায়। আর রাতে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক নিলুফার ইয়াসমিন জানান, রাতে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছে। তার পেটে টেপ লাগানো ছিল। সেখানে কাটা দাগ রয়েছে। তবে মেয়েটি এখন সুস্থ আছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর কবির বলেন, মেয়েটি রাতেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সোমবার সকালে পুলিশের লিখিত পেয়েছি। তবে মেডিকেল বোর্ড গঠন ছাড়া এ বিষয়ে মতামত দেয়া সম্ভব নয়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।

সূত্র জানায়, ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ওই মেয়েটির মা যশোরের ঝিকরগাছার বাকুড়া এলাকার দাউদ সরদারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। ওই বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে গৃহকর্তা দাউদ তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে হুমকি ও ভয়ভীতিতে তার পরিবার এলাকা ছেড়ে যশোর শহরের বারান্দী পাড়া এলাকায় আশ্রয় নেয়। এরপর গত ২০ অক্টোবর দাউদ সরদারকে আসামি করে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল যশোরে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলার নম্বর পিং-২২৮/১৫।

মামলার পর গত ২৩ অক্টোবর মেয়েটি শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর রাতে মেয়েটির মা বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় অপহরণের আরও একটি মামলা করেন। মামলার নম্বর ১২৩। ডাক্তারি রিপোর্টে মেয়েটির আগামী ৫ নভেম্বর ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই অপহরণের পর ডেলিভারির মাধ্যমে তার সন্তান প্রসব করানো হয়।

এদিকে, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর যশোরে পালিয়ে এসে অপহরণের শিকার হওয়ায় মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা রিপোর্ট ও আইনি প্রক্রিয়ায়ও অভিযুক্তরা প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমনও শঙ্কা তাদের। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা জানান, ধর্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের মধ্যে ভয় রয়েছে। মেয়েটিকে অপহরণ করে তার সন্তান হত্যা করেছে। এখন মেয়েটির জীবনও নিরাপদ নয়।

যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলী জানিয়েছেন, মেয়েটি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার নিরাপত্তা ও মামলায় যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার মেয়েটির চিকিৎসাধীন ওয়ার্ড থেকে অভিযুক্তদের দু’জন স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও পুলিশ আটক করেছে।

মিলন রহমান/এমএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।