মৎস্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মৎস্য খাতকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ কারণে বর্তমান সরকারের আমলে মৎস্য খাতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মাছের উৎপাদনে পরিপূর্ণতা এসেছে। এখন কোথাও মাছের সংকট নেই। যে পরিমাণ মাছ আমাদের প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে। এ পরিবর্তনের ম্যাজিশিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) অডিটোরিয়ামে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত কৈ, তেলাপিয়া এবং সাদা পাঙ্গাসের জার্মপ্লাজম মৎস্য অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ ও মো. লিয়াকত আলীসহ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, টেংরা, পাবদা, শিংসহ হারিয়ে যাওয়া যেসব মাছ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, বিলুপ্তপ্রায় সেসব মাছ আমরা আবার ফিরিয়ে আনছি। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাঙালির নিজস্ব প্রজাতির মাছ মানুষের দোরগোড়ায় ফিরিয়ে আনার সমস্ত প্রক্রিয়া আমরা সামনে নিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে আমাদের মাছের চাহিদা রয়েছে। মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে আমরা একদিকে পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ করছি, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। মৎস্য খাতকে এমন একটি জায়গায় আমরা নিয়ে যাব, যেখানে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হবে, বেকার মানুষ উদ্যোক্তা হবে। দারিদ্র্য দূর হবে, পুষ্টির অভাব দূর হবে, খাদ্যের অভাব দূর হবে। অর্থাৎ এই খাতের ব্যবহারের পরিসর অনেক বড় হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, মৎস্য খাতে যারা বিনিয়োগ করছেন তাদের স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে আমরা ঋণ দিচ্ছি। মৎস্য খাতের ক্ষতিগ্রস্থদের আমরা আর্থিক প্রণোদনা দেব, যেন তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কোনো মানুষ বিপন্ন থাকবে না। প্রান্তিক পর্যায়ের একটা পুকুর আমরা ফেলে রাখতে দেবো না। পুকুর খননের জন্য সাহায্য করা হবে, পুকুরে আধুনিক জাতের পোনা মাছ সরবরাহ করা হবে, পুকুরের মাছের খাবারের জন্য ভর্তুকি দেয়া হবে, কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। মৎস্য সম্পদ আমরা সারাদেশে বিস্তৃত করবো।
বর্তমানে মৎস্য সেক্টর একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ, আধুনিক, উন্নত সোনার বাংলায় সত্যি সত্যি পরিণত করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে পরিণত হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। এ খাতকে আমরা পরিকল্পিতভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন মন্ত্রী।
এদিন সকালে বিএফআরআই ক্যাম্পাসে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। পরে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানি কেন্দ্রে চলমান গবেষণা কার্যক্রম তথা মাছের জাত উন্নয়ন, বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও চাষ, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ, অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ কুচিয়া ও মুক্তা চাষ, মহাশোল ও পাঙ্গাস মাছের প্রজনন ও চাষ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
এরপর বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাঝে মাছের পোনা বিতরণ করেন তিনি। বিকেলে বিএফআরআইয়ের গবেষণা অগ্রগতি উপস্থাপন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
এমইউ/এইচএ/এমএস