মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চের অর্ধদিবস হরতাল


প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৫

জঙ্গিদের জোড়া হামলায় এক প্রকাশক ও দুই ব্লগার আহত এবং অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দিপনকে হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারাদেশে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।

তবে যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আটক করতে পারলে মঙ্গলবারের হরতালের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়।

এছাড়া সোমবার সরাদেশে শোক দিবস পালন করবে তারা। ওই দিন সকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে এবং সন্ধ্যায় হরতালের সমর্থনে শাহবাগে একটি মশাল মিছিল করবে সংগঠনটি।

রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগস্ত কেন্দ্রীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরার এইচ সরকার।

বিক্ষোভ সমাবেশ ইমরান বলেন, ‘একের পর এক হত্যা হচ্ছে। আমরা বিচার চাচ্ছি, ঘরে ফিরে যাচ্ছি। সরকার একই রেকর্ড করা গান বাজাচ্ছে। ব্লগার, বিজ্ঞানীর পর এখন প্রকাশকদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর বিবৃতিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তাদের এ হত্যাকাণ্ড নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। যারা একটা ধর্মীয় উগ্রবাদীকে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন, যারা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেন, সাম্য ও বৈষম্যমুক্ত সমাজে বিশ্বাস করেন সে সকল মানুষকে তাদের টার্গেট করছে। আপনি কোন রাজনৈতিক দল করেন সেটা দেখার বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে আপনি তাদের সাথে একমত নন। বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্টেটের নামে যে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তার সাথে একমত না হলে আপনাকে হত্যা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এই সরকারকে ক্ষমতায় আসীন করেছে এই বলে যে, আপনারা জঙ্গিবাদ মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন। এই রাষ্ট্রকে জঙ্গিাবদের হাত থেকে মোকাবেলা করবেন। অথচ আজকে তারা একের পর এক জঙ্গিদের প্রশ্রয় দিয়ে যেখানে নিয়ে যাচ্ছেন, যদি কোন ধরনের ব্যর্থতার মুখোমুখি হয় তাহলে এদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এরাই এর জন্য দায়ী থাকবে । তাদেরকে মৌলবাদী জঙ্গিদের পাহারা দেওয়ার জন্য ক্ষমতায় পাঠাইনি। মৌলবাদীর হাত থেকে এদেশর ১৬ কোটি মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য পাঠিয়েছিলাম। তারা বক্তব্য বিবৃতি দিতে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যাতে আজকে অফিসে, ঘরে ঢুকে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে।’

সরকারকে উদ্দেশ্য করে ইমরান বলেন, ‘সীমালঙ্ঘনের প্রশ্ন নয়, আপনারা নিজের সীমানা ঠিক করুণ। আপনারা জনেণের নিরাপত্তা দিবেন কি না? মানুষের পাশে দাঁড়াবেন কি না এই সিদ্ধান্ত নিন। আমি জানতে চাই আপনাদের তো দল আছে , আপনারা রাজপথে নেই কেন?  তাহলে কি আমি ধরে নিব আপনারা কি হত্যাকারীদের পক্ষে আছেন? আমি এই প্রশ্ন সরকারের কাছে রাখছি। জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করলে এই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা কঠিন হবে না।’

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেন, ‘দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে আমার সরাসরি ছাত্র। আমি এ নিয়ে সরকারের কাছে বিচার চাই না। কারণ সরকার তা করতে পারবে না। একটি ত্রিভুজের মাথায় মুল শক্তি আছে। তাহলো বৈশ্বিক পুঁজিবাদ। রয়েছে আমেরিকা। ত্রিভুজের মাথায় রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এক বাহুতে জঙ্গিবাদ। আর তৃতীয় বাহুতে রয়েছে মৌলবাদের অর্থনীতি। নিচে ২৪১টি এনপিও ট্রাস্টি আছে যাদের সাথে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক আছে। তাই যারা বিচার চায়, তাদের আমি বলব আপনারা কার কাছে বিচার চাইছেন?’

কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এরকম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ৩০ লাখ মানুষকে শহীদ করেও জাতীয় সত্ত্বাকে হত্যা করা যায়নি। খুনিরা খুন করে পরে ঘোষণা দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না । সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।’

এসময় খুশি কবির বলেন, ‘এই প্রযুক্তির যুগে প্রকাশকের দরকার নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে বই আরো বাড়বে, মানুষকে এসব আরো জানাব। তাই হত্যা করে ভয় দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে রাখতে পারবে না।’

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, ‘দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ নেই। তাহলে এগুলো কারা ঘটায়?

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহীন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।

এমএইচ/এমইউ/এসকেডি/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।