বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে


প্রকাশিত: ০৮:৪০ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৫

‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে সাধারণ মানুষ আজ আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। যার কারণে পুত্র হত্যার বিচারও চান না পিতা। যোগ্যতায় নয়, ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ের বদৌলতে প্রমোশন পান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’

রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এভাবে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। দীপন হত্যা ও তিন লেখককে হত্যা পচেষ্টার প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, লেখক-নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশটির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রকাশক, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, গত কয়েক বছরে যে সব গুপ্ত হত্যা হয়েছে তার একটিরও বিচার হয়নি। যে কারণে দীপনের বাবা ছেলে হত্যার বিচার চায়নি। রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। আজ মানুষ এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতেও ভুলে যাচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের বিচার আশা করা দুরাশা মাত্র।

আবুল মকসুদ আরো বলেন, রাষ্ট্র যদি তার অবস্থান নিশ্চিত না করে রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর, জনগণের জন্যও ক্ষতিকর। এই হত্যাকাণ্ডেরও হয়তোবা বিচার হবেনা, তবুও আমরা সবাই আজকে যারা একত্রিত হয়েছি সবাই এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাই।

ঢাবির আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্র প্রতিটি পর্যায়ে যে গণতান্ত্রিক স্পেস তা বিনষ্ট  করেছে। রাষ্ট্রের আছে আমাদের পকেটের টাকা। সে টাকায় আছে নিরাপত্তাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা। তারা বলছে- তারা নিজেদের যোগ্যতায় নয়, ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ের বদৌলতে প্রমোশন পান, ঢাকায় বাস করেন।

এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাহীনতাই স্বাভাবিক। এই অনাস্থাই জানিয়েছেন দীপনের বাবা। তিনি বলেন, অবাক হই, সব হত্যাকাণ্ডের পর সুশীলরাও একভাবে  ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন। যার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, সরকার মধ্যপন্থা ও নিরপেক্ষতার নাম করে আক্রমণকারী ও আক্রান্তদের একই পাল্লায় রেখে দিচ্ছে। সরকারের উচিত এখনই তার অবস্থান নিশ্চিত করা।

প্রকাশক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার কথা তিনটা। হয় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যার বিচার করতে হবে, অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাকেও হত্যা করতে হবে অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর বলেন, রাষ্ট্রকে এইসব হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি প্রগতিশীল জোটগুলোর সাপোর্ট চায় তাহলে অবশ্যই তাদের অবস্থান জানাতে হবে। আ’লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। যখন তাদেরকেও হত্যা করা হবে তখন ও এই জনগণ তাদের পাশে দাঁড়াবেনা।

এদিকে দুপুর দেড়টায় দীপনের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাযার জন্যে নিয়ে আসা হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগে এসে শেষ হয়। সমাবেশে সোমবারের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি।

এমএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।