গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, বিপাকে খামারি-গৃহস্থরা

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ২৯ আগস্ট ২০২০
ফাইল ছবি

অডিও শুনুন

বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান। কৃষি কাজের পাশাপাশি ৫টি গরুও লালন-পালন করেন। কিন্তু গো-খাদ্যের যে দাম, এতে যারা গরু লালন-পালন করছেন তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। হবিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে ঘাসের আঁটি বন্যার আগে ১০ টাকা ছিল, সেটি এখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। যে খড় ছিল ৫/৬ টাকা কেজি, সেটি এখন ২০ টাকা। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দ্রুত চাষ দিয়ে ফসল ফলানোর কাজ করছে। ফাঁকা কোনো গো-চারণ ভূমিও নেই। এমতাবস্থায় গরু/ছাগল/ ভেড়া নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।’

বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এবার বন্যা শুরুর পর থেকেই গোটা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ৩৮টি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এখন এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। কারণ বন্যায় ঘাসের জমি, আউশ, বোনা আমন সব ডুবে গেছে। বোরো ধানের খড় এমনিতেই কম হয়। এই খড় গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারে না। ফলে গৃহস্থরা সারা বছর আমনের খড় দিয়েই চাহিদা মেটান। এবার বোরো ধান কাটার সময় বৃষ্টিতে অনেকের খড় পচে গেছে। তাছাড়া বন্যায় অনেকের খড় ডুবে নষ্ট হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জের সাংবাদিক রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। যারা পশু লালন-পালন করেন, তারা খুব বিপদের মধ্যে আছেন। বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা ঘাস, খড় ও ভুসিসহ সব কিছুই অতিরিক্ত দামে কিনে গরু লালন-পালন করছেন। অনেকের হাতে টাকা নেই। কেউ কেউ কচুরিপানা, লতাপাতা, তরকারির খোসা, বেঁচে ফেলে দেয়া শাক ও বাজারের ফেলে দেয়া তরিতরকারি কুড়িয়ে এনে খাওয়াচ্ছেন।’

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলা, শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, উল্লাপাড়া এবং কাজীপুর উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দাদের পেশা গবাদি পশু পালন। বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।

শাহজাদপুর উপজেলায় খামারি নবীর উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘খড়ের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ঘাস কিনতে হচ্ছে দ্বিগুন দামে। কোরবানিতে ৬টি গরু বিক্রি করেছি। আরও ১০টি গরু আছে। যেটা লালন-পালন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘মোট আট হাজার ৫৬২ একর গো-চারণ ভূমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ৭৭০ টন ঘাস এবং ৫৮৮ টন খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক মাসের বন্যায়। প্রায় ১০ লাখ গরু, তিন লাখ ছাগল এবং দেড় লাখ ভেড়া পালন করছেন জেলার খামারিরা।’

পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার খামারি বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যার পানিতে গো-চারণ ভূমি ও ঘাসের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভুসিসহ এলাকায় গরুর দানাদার যেসব খাদ্যে বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অনেকেই ভেজাল দিয়ে বিক্রি করছেন। এসব খাদ্য খাওয়ালে গরু পাতলা পায়খানা করে। এছাড়া ভাটি এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট বেশি। ফলে এসব এলাকার গো-খামারিরা চলনবিল এলাকা থেকে বেশি দামে খড় ক্রয় করে নৌকা ও সড়ক পথে নিয়ে যাচ্ছেন ভাটির দিকে।’

চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের হাশেম উদ্দিন জানান, ‘প্রতি মণ খড় প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খইল ভুসির দামও অনেক বেড়েছে। বাধ্য হয়ে বিল ও নদী থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে খাওয়াতে হচ্ছে। এতে গবাদি পশু মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গাভি গরুর দুধ কমে যাচ্ছে।’

চাটমোহর প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘অনেক খামারি খাদ্য সংকটের কারণে এগুলো খাওয়াচ্ছেন বলে শুনেছি। প্রতিবছর বন্যার কারণে চলনবিল এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তবে গবাদি পশুকে কচুরিপানা বা অন্যান্য গাছের পাতা না খাওয়ানো ভালো। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

খবর নিয়ে জানা গেছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক ও গো-মহিষের খামারিরা গো-খাদ্য সংকটে বিপদের মধ্যে আছেন।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুরী গ্রামের সাজু মিয়া বলেন, বন্যায় মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আউশ ধান, বোনা আমনসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বন্যার পানি নেমে গেছে। সবাই জমি চাষ করে ফসল লাগাতে ব্যস্ত। কোনো ফাঁকা মাঠ নেই। ফলে পালের ৪৫টি মহিষ নিয়ে বিপাকে পড়েছি। খাদ্যের যে দাম, এতে এতগুলো মহিষকে কেনা খাদ্য খাওয়ানো খুব কঠিন।’

এফএইচএস/এফআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।