সিইসিসহ সব কমিশনার সরে দাঁড়ালে জাতি উপকৃত হবে : টিআইবি
অডিও শুনুন
‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর ৯১-ই ধারায় কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত ছিল এর বিলোপ সাধন করে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০২০’ এর খসড়া তৈরির খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
দেশের মানুষের মধ্যে যখন নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহ ও আস্থার সংকট বাড়ছে তখন নিজেকে আরও দুর্বল করার হীন আত্মঘাতী উদ্যোগ কার স্বার্থে? এমন প্রশ্ন রেখে টিআইবি বলছে, ‘নির্বাচন কমিশনের এ জাতীয় অভূতপূর্ব স্বেচ্ছাসমর্পণমূলক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কমিশনের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে নিজেদের এভাবে অযোগ্য মনে করলে প্রধান কমিশনারসহ সব কমিশনার স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালে জাতি উপকৃত হবে।’
‘প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯১-ই ধারার ১ ও ২ উপধারা অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তা তদন্ত করে দেখা এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার সরাসরি ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। সেটি কী যুক্তিতে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে তার যে ব্যাখ্যাই কমিশন দিক না কেন, এটি যে ভালো কোনো উদ্দেশে করা হচ্ছে না বরং কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে দেয়ার হীন চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজেরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এ ধারা প্রয়োগ করার সৎসাহস রাখেন না বিধায়, মাথা ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার অপপ্রয়াস এই উদ্যোগ কি না এই প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।’
‘জনগণের কাছে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা কোন অবস্থানে আছে সেটা অনুধাবন করতে পারাটা এখন তাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব’ এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশনের যেখানে তার সাংবিধানিক মর্যাদা ও সুনাম পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট থাকা উচিত, সেখানে সম্ভবত জেনে বুঝেই তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে নিজেদের আত্মদানমূলক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর মতো একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া এর পরিবর্তন কেন দরকার পড়ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। নির্বাচন কমিশন বোধহয় ভুলতে বসেছে যে, এটা একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, কারও আজ্ঞাবহ নয়। দেশ ও জাতির স্বার্থে বর্তমান কমিশনের সুমতি যত দ্রুত ফিরবে ততই মঙ্গল।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ ও পদবির পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত এবং কর্তব্যের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের সংস্কার করে সম্পূর্ণ নতুন ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন, ২০২০’ নামে বিলের যে খসড়া নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত করেছে, তার জন্য তাদের সামর্থ্য ও নৈতিকভিত্তি কতটুকু রয়েছে, তা সততার সঙ্গে আরও একবার ভেবে দেখার আহ্বান জানায় টিআইবি।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ইতোপূর্বে কমিশনের অধীনে যেসব জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ভোটারের উপস্থিতি, নির্বাচনী পরিবেশ, সর্বোপরি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তার গুণগত কোনো পরিবর্তন কী ঘটবে এই নতুন আইনের মাধ্যমে? যদি না-ই ঘটে, তাহলে এ জাতীয় নতুন আইনের যৌক্তিকতা কোথায়, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত ‘নির্বাচন কমিশন’ নামটি আর কলঙ্কিত না করে ইতোমধ্যে জনসাধারণের মাঝে তাদের প্রতি যে আস্থার সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা উপলব্ধি করে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিবন্ধনের সুস্পষ্ট বিধান থাকার পরও আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ এর খসড়া প্রণয়ন প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে ড. জামান বলেন ‘বিদ্যমান আইনে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিধান থেকে সরে এসে স্বতন্ত্র আইনের খসড়ায় দুটি শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতাসহ বেশকিছু পরোক্ষ শর্তপূরণের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং পক্ষপাতদুষ্ট। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন বাস্তবে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নয় বরং বিশেষ কোনো দলীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে তৎপর রয়েছে, যা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কমিশনের জন্য অভূতপূর্ব মাত্রায় বিব্রতকর।’
যদি আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন’ করতেই হয় তবে তা সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ সব অংশীজনের মতামতের পর্যাপ্ত গুরুত্ব প্রদান সাপেক্ষে করা অপরিহার্য বলে মনে করছে টিআইবি।
এইচএস/এফআর/এমকেএইচ