ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে জাতীয় কবির সমাধি
সকাল সাড়ে ৯টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে শাহবাগমুখী রাস্তায় অসংখ্য প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশার যানজট লেগে আছে।ফুটপাতেও নারী, পুরুষ ও শিশুদের ভিড়। ট্রাফিক পুলিশের দুইজন সার্জেন্টকে যানজট দূর করতে তৎপর দেখা যায়। উৎসুক মানুষরা জানতে চাচ্ছিলেন-আজ এ রাস্তায় এত ভিড় কেন? সামনে এগিয়ে যেতে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই ফুল হাতে চারুকলা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির দিকে ছুটছেন।
আজ ১২ ভাদ্র, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যায় কবির সমাধি।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্পার্ঘ অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। সকালে একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। একক বক্তব্য দেবেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি এবং নজরুলগীতি পরিবেশনা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবিকে একটি বাড়ি দেন।
এমইউ/এসআর/জেআইএম