শুদ্ধস্বরে টার্গেট ছিল হত্যা : মিশন তিন মিনিটের


প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ার সি-ব্লকে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলাকারীদের মিশন ছিল তিন মিনিটের। পরিকল্পনায় ছিল হত্যা। পরিকল্পিতভাবে মিশন শেষ নির্বিঘ্নে চলে যায় হামলাকারীরা। শুধু তাই নয় যাওয়ার সময় সঙ্গে আনা বড় তালা দরজায় ঝুলিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

পুলিশের দাবি, একেবারেই পরিকল্পিত ঘটনা এটি। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার আগে হামলাকারীরা বেশ কয়েকবার ওই এলাকাটি রেকিও করেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম বিভাগ) উপ-কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকাশক ও ব্লগারদের উপর হামলার মিশনে এসেছিল তারা। হামলায় অংশ নিয়েছিল মোট পাঁচজন।

তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে মিশন শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। হামলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে তাদের টার্গেট ছিল হত্যা। একারণে হয়তো হামলা করে রুমে তালা মেরে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

তিনি আরো জানান, হামলার চালানোর আগে তারা এলাকাটি বেশ কয়েকবার রেকি করেছিল। দুপুর বেলাকে উপযুক্ত সময় বেছে নেয় তারা। কারণ এ সময়ে সাধারণত: বাসার কেয়ারটেকার ও বাসার আসে-পাশে লোকজন কম থাকে।
বাসায় দেখা যায়, বাসার ভেতরে বইপত্র, চেয়ার টেবিল এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। আমরা ঘটনার পর ইতোমধ্যে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেয়ারটেকার শরিফুল ইসলাম শরীফকে আটক করা হয়েছে।

লালমাটিয়াস্থ সি ব্লকের ৮/১৩ নং পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবনের চারতলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ের পাঁচজনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করে।

এ ঘটনায় আহত শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, তারেক রহিম ও রনদীপম বসু, ওয়াশিকুর ও রাসেল নামে পাঁচজনকে গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পাশের ফ্ল্যাটের গৃহপরিচারিকা ফুলমতি জানান, হঠাৎ পাশের বাসা থেকে চিৎকার-চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। মনে হচ্ছিল, কারা যেন ভেতর থেকে দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে। পরে আমি আমার স্যারকে বিষয়টি জানাই। তখন লোকজন জড়ো  হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতর ঢুকে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া সৈয়দ গোলাম মোর্শেদ বলেন, আমার বাসার কাজের মেয়ে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরের চিৎকার চেচামেচি শুনে আমাকে জানায়। তখন আমি বাথরুমে ছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে আমিও চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই।

বাসার দারোয়ান আলামিন জানান, ঘটনার সময় তারা এখানে ছিলেন না। দোকানে গিয়েছিলেন।
পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের(পিআইবি)পরিদর্শক মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা শ্যাডো উইল ইনফেস্টিগেশন করছি। বলতে পারেন পুলিশের সহযোগীতায় ছায়া তদন্ত। তবে আমরা কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছি তা এই মূহুর্তে তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর থানার ইন্সপেক্টর(তদন্ত) জানে আলম মুন্সি জানান, দুর্বৃত্তরা চার থেকে পাঁচজন ছিল। এদের মধ্যে একজন বই কেনার কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। পরে অস্ত্রের মুখে প্রকাশক টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে জিম্মি করে। পরে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। চাপাতির পাশাপাশি রিভলভার দিয়েও গুলি করে। এসময় ফ্ল্যাটের একটি রুমে কর্মরত ওয়াশিকুল হক ও শুদ্ধস্বরের অফিস সহায়ক রাসেলকে আটকে রাখে দুর্বৃত্তরা।
ওই ভবনের নিচতলার বেলটেক সিস্টেমের (সফটওয়্যার ফার্ম) কর্মকর্তা মো. সমরিয়া রায়হান রনি বলেন, দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ উপরে চিৎকার ও হইচই শুনতে পাই।

সিআইডির ইন্সপেক্টর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে হঠাৎ আমার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। তাতে লেখা ছিল, ভাই প্লিজ আমাদের বাঁচান। নিচে লেখা ছিল টুটুল। তখন আমি মোহাম্মদপুর থানায় বসা ছিলাম। এসএমএসটি পড়ে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি। পরে একজন পরিদর্শককে তাৎক্ষণিক টুটুলের বাসায় যাওয়ার নির্দেশ দেই। সে ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

জেইউ/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।